গত কয়েকদিন ধরেই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে উত্তাল সারাদেশ। এক দফা এক দাবিতে রাজপথে নেমে এসেছে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের রেশ ধরে অনেক স্থানে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে এবং প্রাণ হারিয়েছে কয়েকজন শিক্ষার্থীরা।
প্রথম দিকে আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে চললেও, বর্তমানে পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠেছে। এই আন্দোলনের খবর এবার উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমেও।
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে এবার মুখ খুললেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।
গতকাল রাতে ইলিয়াস কাঞ্চন তার ফেসবুক পেইজে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে কোটা আন্দোলন নিয়ে নানা কথা বলেন তিনি। তার ফেসবুকে পোষ্ট করা ভিডিও বার্তা তুলে ধরা হলো–
প্রিয় দেশবাসী সকলের প্রতি আমার ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা রইলো এবং বিশেষ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি। যাদের রক্ত এবং বীরত্বের মাধ্যমে আমাদের এই দেশটি অর্জন করেছি। সেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন রেখে আজকে আমি বলতে চাচ্ছি যে, এই কয়েকদিন ধরে যে ঘটনাগুলো আমি পর্যবেক্ষণ করছি কোটা নিয়ে যে ছাত্রদের আন্দোলন যেখানে আজকে সারাদেশে পাঁচজন আমাদের সন্তান মৃত্যু বরণ করেছে এবং অনেকে আহত হয়েছে। সেই জন্য আমার কাছে মনে হয়েছে যে আর চুপ থাকা আসলে ঠিক না। সেই কারণের জন্যই আজকে আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।
দেশ স্বাধীন হয়েছে বাহান্ন বছর হয়ে গেছে এই বাহান্ন বছরে আমাদের যে মুক্তিযোদ্ধারা ছিল তারা কোটার মাধ্যমে চাকরি অনেকে করেছেন অনেকেই এখন এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। এমনকি তাদের সন্তানরা যারা ছিল আমি মনে করি তাদেরও প্রায় বেশিরভাগই কিন্তু এই কোটার মাধ্যমে সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন। এখন যারা আছে মূলত তারা হলো পেরের প্রজন্ম।
এই মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের জন্য এখন এই কোটা এই বাহান্ন বছর স্বাধীনতার পর আমার মনে হয় যে এটি যৌক্তিক নয়। তার কারণ হলো, আমরা এরই মধ্যে কিন্তু অনেক মেধাবী সন্তানদেরকে হারিয়েছি কিন্তু যারা এই দেশের সুযোগ না পেয়ে বিদেশে চলে গেছে এবং বিদেশে গিয়ে সে সমস্ত দেশের উন্নয়নে কিন্তু তাদের মেধাকে কাজে লাগিয়েছে।
যাই হোক শুরুর দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে আমরা যে কাজটি করেছি সেটি ঠিক আছে কিন্তু এখন এই প্রজন্মর জায়গাতে এসে যদি তাদের জন্যও কিছু করতে হয় তাহলে আমি সরকারকে বলবো যে তাদের আর্থিক ভাবে কিংবা অন্যভাবে তাদের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হোক। কিন্তু এই যে মেধার যে বিষয়টি আছে চাকরীর এবং অন্যান্য জায়গার যে সুযোগ গুলো আছে সেই জায়গায় যদি আমার যোগ্যতার ভিত্তিতে যদি আমাদের সন্তানরা উঠে আসে তাহলে দেশ অনেক বেশি লাভবান হবে।
দেশ অনেক বেশি উপকৃত হবে। এবং আমি আরেকটি জিনিস যেটি মনে করি, আমাদের এই যে আজকের এই আন্দোলনের মধ্যে যে জিনিসটি তৈরি হয়েছে তাতে আমার মনে হয়েছে এই বৈষম্য যদি থাকে তাহলে কিন্তু দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসার একটা তারতম্য ঘটবে। কাজেই আমাদের এই প্রজন্মকে সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেমিক বানাতে গেলে এবং দেশপ্রেম দেশের মানুষের প্রতি প্রেম যদি শেখােতে হয় এবং দেশের উন্নয়নের কাজে যদি লাগাতে হয় তাহলে আমি মনে করি আমাদের সন্তানরা যে কোঠা বৈষম্যের আন্দোলনটি করছে সেইটি যৌক্তিক। এবং যৌক্তিক মনে করে আজকে আমি কথাগুলো বলছি। আমাদের এই সন্তানদের এই দাবিটা মেনে নেওয়া হোক।
আর যেন কোন জীবন এই আন্দোলনের জন্য চলে না যায়। আর কারো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। আর কেউ যেন আহত না হয় এবং এই রাস্তার মধ্যে আমাদের সন্তানরা এইভাবে আন্দোলন করুক এইটিও আমি আসলে চাই না।
আমি এই সরকারের কাছে অনুরোধ করবো আপনারা এই দাবীটুকু মেনে নেন। এটি দেশের জন্য উপকৃত হবে। কারণ এই যে বৈষম্যের যে বিষয়টি, দেশপ্রেমের মধ্যে এটি কিন্তু দূর হবে। আমি আশা করি সরকার জিনিসগুলো বুঝবেন, দেশবাসী আপনারাও বুঝবেন এবং আমি বিশ্বাস করি আর যেন কোন জীবন কোটা আন্দোলনের জন্য এরকম ভাবে কোন মায়ের বুক যেন খাঁলি না হয়।
আপনারা সকলে মিলে দেশকে দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশের ভালোর জন্য, দেশের ভালবাসার জন্য, দেশের জনগণের জন্য এই কোটা আন্দোলনটি মেনে নেবেন।
আসসালামু আলাইকুম
-ইলিয়াস কাঞ্চন
চেয়ারম্যান, নিরাপদ সড়ক চাই।