অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত নিরাপদ সড়ক বিনির্মাণের নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ভাইকে ডেকে নিয়ে তার কথা শোনা এবং ইলিয়াস কাঞ্চনকে প্রাপ্য সম্মান দেওয়া। ইলিয়াস কাঞ্চন নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে সফল কারণ এর কাজের কারণে অনেক মানুষের প্রাণ বেঁচে গেছে। তিনি দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে লড়াই করছে মানুষকে সচেতন করছে এই দীর্ঘ বছরে কি একজন মানুষও তার কথায় সচেতন হয়নি বা সচেতন হয়ে মৃত্যুর হাত থেকে বাচেনি? এটাই ওনার সার্থকতা এখানেই তিনি সফল। নিরাপদ সড়কের জন্য ইলিয়াস কাঞ্চন ভাই যে আন্দোলন করে যাচ্ছে এটি সত্যি প্রশংসনীয়। নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নের জন্য নিরাপদ রাষ্ট্র ও সরকার প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছর যারা রাষ্ট্রের চালক ছিল তারা জনজীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিল। মানুষ শুধু সড়কে নয়, নিজ ঘরের বেডরুমেও নিরাপদ ছিল না। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সড়কে, ঘরে এমনকি মায়ের কোলের শিশুকেও তারা গুলি করে হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগ রাজনীতির সড়কে লাশ আর রক্ত ফেলার কাজে নিয়োজিত ছিল। জনগণের জান ও মাল তাদের হাতে নিরাপদ ছিল না।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে নিরাপদ সড়ক চাই’র (নিসচা) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ অন্তবর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকে নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে ডেকে নিয়ে তাদের কর্মসূচি নাগরিক স্বার্থে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।
তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে হত্যার উদ্দেশ্যে ট্রাকলীগ দিয়ে সড়কে ট্রাকচাপা দেওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। এবং এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, কোনো স্বাধীন দেশের পতাকা প্রতিবেশী রাষ্ট্র অবমাননা করতে পারে না। গণতান্ত্রিক কোনো দেশে অপর দেশের সহকারী হাইকমিশনার কার্যালয় ভাঙচুর করতে পারে না। নিরাপদ সড়কের জন্য নিরাপদ রাষ্ট্র প্রয়োজন। আর নিরাপদ রাষ্ট্রের জন্য নিরাপদ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রয়োজন। এই প্রতিবেশী শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, পুরো পৃথিবীর জন্য হুমকি।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাঙালি জাতি এক ও অভিন্ন। আমাদের পরিচয় হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, আদিবাসী বা উপজাতি নয়, আমাদের পরিচয় আমরা সবাই বাংলাদেশি। অতীতে যেমন আমরা সব অপশক্তি এক ও অভিন্ন হয়ে মোকাবিলা করেছি আগামীতেও আমরা এক ও অভিন্ন হয়ে মোকাবিলা করবো।
সভায় জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুর রহমান মাসুদ সড়ক নিরাপত্তায় চার সুপারিশ পশে করেন। নিরাপদ সড়কের জন্য দরকার নিরাপদ রাষ্ট্র, নিরাপদ শাসক, নিরাপদ সড়ক। সড়কে বাসের নিচে জীবন দিচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। তিনি সড়ক নিরাপত্তার চারটি সুপারিশ তুলে ধরে বলেন, এজন্য নাগরিক শ্রেণির মধ্যে মূল্যবোধের জন্ম দিতে হবে; ব্যক্তিকে নয়, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালকদের লাইসেন্স দিতে হবে। কোনো চালক যাতে ভুল করলে তাকে নয়, প্রতিষ্ঠানকে ধরতে হবে; মানবিক মূল্যবোধের মর্যাদা সৃষ্টি করতে হবে এবং ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে হবে।
নিরাপদ সড়ক চাই’র চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সুশীল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বক্তব্য রাখেন।