English

16 C
Dhaka
সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪
- Advertisement -

২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে নিসচা কেন্দ্রীয় কমিটির সহায়তা প্রদান

- Advertisements -

এ কে এম ওবায়দুর রহমান: নিরাপদ সড়ক চাই দীর্ঘ ২৯ বছরের পথপরিক্রমায় সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সড়ককে নিরাপদ করার লক্ষ্যে যে আন্দোলন ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিবারের ন্যায় এবারও নিসচা’র ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে সারাদেশে সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।

গতকাল ১ ডিসেম্বর থেকে সারাদেশে এই কার্যক্রমের সূচনা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে আজ ২ ডিসেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় এই কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। উক্ত আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের মাননীয় সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিআরটিএ-এর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার। সভাপতিত্ব করেন নিসচা প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন নিসচা মহাসচিব লিটন এরশাদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহবায়ক কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ফিরোজ আলম মিলন। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক মোঃ রোকনুজ্জামান রোকন। শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আজাদ হোসেন।

তিন দশকের পথচলায় এই সংগঠনের কর্মীবাহিনী সুশৃঙ্খলভাবে সড়কে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত রয়েছে। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন সড়কের নিরাপত্তার কথা বলে আসলেও দেশের যে কোন দুর্যোগ এবং অসহায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাাঁড়িয়ে থাকে। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় পরিবারকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে প্রতিবছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জনকল্যানমুখী কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে থাকে। এই কর্ম পরিকল্পনায় নগদ অর্থসহ আয়মূলক বিভিন্ন লজিস্টিক সাপোর্ট প্রদান করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে মোমবাতি মেশিন প্রদান, হুইল চেয়ার, কৃত্রিম পা, ক্র্যাচ, ছোট দোকান তৈরি করে দেয়া (পুঁজিসহ), গরু-ছাগল প্রদান, সেলাই মেশিন বিতরণ, গৃহহীনদের ঘর তৈরি করে দেয়া এবং শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ। প্রতিবছরের ন্যায় এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সহায়তামূলক কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।

এবার শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ, বিনামূল্যে চক্ষু ক্যাম্প পরিচালনা, ১০টি গৃহহীন পরিবারকে ঘর প্রদান, সেলাই মেশিন বিতরণ ও সারাদেশে ৩০০ পরিবারের মাঝে ছাগল বিতরণ করা হবে।

নিসচার পক্ষ থেকে জানানো হয়, আমরা মানবিক কাজে ইচ্ছেশক্তির পূর্ণ ব্যবহার করে থাকি। আমাদের সকল কাজে বিভিন্ন জনের সাড়াও থাকে। আমরা সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে এগিয়ে যেতে চাই। চাই সড়কসহ সকল ধরনের জনকল্যাণমুখী কাজের মধ্যদিয়ে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে।

নিসচার পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়, সড়কের নিরাপত্তায় জাতিসংঘ একটা প্রেসক্রিপকশন দিয়েছে। পাঁচটা পিলার দিয়েছে। প্রত্যেকটাতে কিন্তু টার্গেট অনুযায়ি কাজ করতে হবে। সড়কের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি স্টেপই গুরুত্বপূর্ণ। সেই সাথে রোড সেফটি নিয়ে আমরা যারা কাজ করছি আমরা ১১১টা সাজেশন দিয়েছি। প্রতিটি সাজেশনকে পরিকল্পনার মধ্যে ফেলে বাস্তবায়নের জন্য সাজাতে হবে এবং কার্যকর করতে হবে। পাশাপাশি সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮- এর পরিপূর্ণ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। দুঃখের বিষয় সেই ১১১টি সাজেশনের এখন কি অবস্থা তাও জানি না। আর আইনের কথা কি বলবো? চার বছর তো চললো এই আইনের এখনো বিধিমালা চূড়ান্ত হয়নি। অথচ এই বিধিমালার জন্য আইনটি এক প্রকার অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে। অথচ এমন কিছু সমস্যা আছে আইন ছাড়া নিরসন করা অসম্ভব। তাহলে বিধিমালা ছাড়া আপনি আইনটাকে প্রয়োগ করবেন কিভাবে। আর আইন ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা যে কাঙ্খিত স্থানে নিয়ে যেতে বলা হচ্ছে সেই টার্গেট কি পূরণ হবে? নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠিত হবে কি?

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী। তিনি বলেন, একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। যার পরিবারে এটি ঘটে, তারা ছাড়া আর কেউ তা বুঝতে পারে না। আমাদের এটি প্রতিরোধ করতে হবে। চালক, পথচারী, যাত্রী ও সংশ্লিষ্টদের অসচেতনতার কারণে ও আইনের প্রয়োগের অভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। তিনি সকলকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন যারা করেন তাদের কোন স্বার্থ নেই। তারা দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবেসে এই কাজ করে থাকেন। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়নের কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে নিসচা। ১ ডিসেম্বর এই কার্যক্রম সূচনা করা হয়। এই সহায়তার অংশ হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে অনুষ্ঠানে ছাগল বিতরণ করা হয়।

ইলিয়াস কাঞ্চন আরো বলেন, ২৯ বছর আগে আমার স্ত্রী মারা যাবার পর এফডিসি থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত একটি র্যালীর মাধ্যমে আমাদের কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। আমি আমার স্ত্রীকে হারিয়েছি আমিতো আমার স্ত্রীকে ফিরে পাবনা কিন্তু আমাদের সন্তানদের এই দেশের মানুষকেতো দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করতে পারব। আমাদের যে মুক্তিযোদ্ধারা যারা গাজি হয়েছেন তাদের অন্তত একটা নিরাপদ সড়ক দিতে পারব। ২৫বছর পাকিস্থানি শাসন আমল সহ্য করে আমরা স্বাধীন হতে পেরেছি। কিন্তু ২৯ বছর যুদ্ধ করে নিরাপদ সড়ক আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। ১লা ডিসেম্বর আমরা নিসচার যাত্রা শুরু করেছিলাম কারণ এই মাসটি হলো বিজয়ের মাস। এই বিজয়ের মাসে আমরা যেন আরেকটি বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারি এই উদ্দেশ্যে।

ইলিয়াস কাঞ্চন আরো বলেন, আসুন সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শপথ করি বিজয়ের এই মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না। যে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত দিয়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আসুন এই দেশকে সড়ক দুর্ঘটনামুক্ত করি। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’র ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সকল সড়কযোদ্ধাসহ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা। সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সবসময় সহযোগিতা করার জন্য।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মঈনুদ্দিন আহমেদ ও বিআরটিএ এর সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান খান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নিসচা’র ভাইস চেয়ারম্যান মঞ্জুলী কাজী, মহাসচিব লিটন এরশাদ, যুগ্মমহাসচিব লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আজাদ হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ফিরোজ আলম মিলন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহমান ও জহিরুল হক মিশু, নির্বাহী সদস্য রোকনুজ্জামান রোকন প্রমুখ।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন