জন সচেতনতা ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর চেয়ারম্যান ও চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, ‘‘সড়ক দূর্ঘটনা রোধে সমাজের সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। জন সচেতনতা ছাড়া সড়ক দূর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয়।’’
মঙ্গলবার দুপুরে সাভার সরকারি কলেজ মাঠে নিরাপদ সড়ক চাই সাভার শাখার আয়োজনে, সড়কে নৈরাজ্য, যানজট নিরসন ও দুর্ঘটনা রোধকল্পে সুধী ও শিক্ষার্থী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন নিরাপদ সড়ক চাই এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।
সমাবেশে ইলিয়াস কাঞ্চন আরো বলেন, আমার জীবনে একটি মর্মান্তিক দূর্ঘটনা ঘটে। সেখানে আমার প্রিয়তমা স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনকে হারাই। এমন ঘটনা আপনার জীবনেও ঘটতে পারে। নিরাপদ সড়ক আমার ব্যক্তিগত আন্দোলন হলেও পরবর্তীতে এটি রাষ্ট্রীয় আন্দোলনে রূপ নেয়। বর্তমানে সরকারিভাবে নিরাপদ সড়ক চাই দিবসটি পালিত হচ্ছে। আমাদের উদ্দেশ্য সড়কে প্রাণহানি কমানো।
তিনি আরো বলেন, তাড়াহুড়া করে সড়কে চলার চেষ্টা করবেন না। একটি দূর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না হতে পারে। দূর্ঘটনার পর ভেঙে পড়তে পারে আপনার পরিবার।
তিনি বলেন সড়ক দুর্ঘটনা মানবসৃষ্ট। একারণে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। পৃথিবীতে অনেশ দেশ আছে সেখানে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে কিন্তু তারা চেষ্টা করে সে দেশগুলোতে তারা সড়ক দুর্ঘটনার হার কমিয়ে এনেছে। আমরাও যদি চেষ্টা করি সকলে যদি সচেতন হই আমরা সকলে যদি নিজেদের দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করি তাহলে কিন্তু আমরা আমাদের দেশের সড়ক দুর্ঘটনাকে কমিয়ে নিয়ে আসতে পারবো।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনারোধে রাজনীতিক ও সরকার এর স্বদিচ্ছার অভাব দূর করতে হবে। আইন বিভাগের ব্যবস্থাপনার অভাব এগুলো দূর করতে হবে। অপরিকল্পিত রোড ডিজাইন এগুলো ঠিক করতে হবে। পরিবহণ শ্রমিকের জীবন মানের উন্নয়ন সাধন করতে হবে। একটা পরিবহন শ্রমিকের জীবন মান উন্নয়ন যদি না হয় তার নিজের জীবনের মূল্য যদি সে না বোঝে তাহলে সে কিন্তু কারোর জীবনের মূল্য উপলব্ধি করতে পারবে না। সে প্রথমেই তার নিজের এবং তার নিজের পরিবারের জীবনের মূল্যায়ন যদি করতে পারে তাহলে কিন্তু সে আমাদের জীবনের মূল্যায়ন করতে পারবে। একারণে পরিবহন শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের দাবি জানান ইলিয়াস কাঞ্চন।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন নিসচা কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুব বিষয়ক সম্পাদক ও ধামরাই উপজেলা শাখার সভাপতি এম নাহিদ মিয়া।
সমাবেশে নিরাপদ সড়ক চাই কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান লিটন এরশাদ তার বক্তব্যে শুরুতে কলেজের অধ্যক্ষের কাছে দাবি প্রকাশ করে বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি একটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সেহেতু স্টুডেন্টদের অধিকাংশই হয়তো মোটরসাইকেল ব্যবহার করে। আমি আপনার কাছে আহবান করছি এই মোটরসাইকেল যারা ড্রাইভ করছেন তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কিনা তারা ট্রেনিং নিয়েছে কিনা। পিএইচডিএ অনুমোদিত হেলমেট তারা ব্যবহার করছে কিনা এই জিনিসগুলোর জন্য একটা মনিটরিং টিম গঠন করবেন অন্তত পক্ষে যেন আপনার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তারা নিয়মের মধ্যে আসতে পারে। লিটন এরশাদ আরো বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। এই প্রজন্মটাকে আমাদেরকে নিরাপদ করে তাদেরকে নিরাপদ কিভাবে থাকতে হয় তারাও তাদের প্রজন্মকে যেন নিরাপদ স্থান গড়ে তুলতে পারে সেটার জন্য আপনি সপ্তাহে অন্তত একদিন এক ঘন্টার জন্য একটা সড়ক নিরাপত্তামূলক ক্লাস এই মাঠে পিটির মধ্যে ব্যবস্থা করবেন।
সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনুল কবির বলেন, আমরা একটি নতুন বাংলাদেশকে নতুন করে সাজানোর চেষ্টা করছি। আমরা সাভারের ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করার জন্য উচ্ছেদ পরিচালনা করতে যাচ্ছি তবে আমি এই কাজগুলো করতে গিয়ে মাঝেমাঝে নানা প্রতিকুলতার সম্মুখিন হয়ে থাকি। আমি এই বিষয়ে সর্বস্তরের সকলের সহযোগীতা কামনা করছি যেন আমরা সড়ককে নিরাপদ করতে সড়ক দখলমুক্ত রাখতে পারি।
সভায় সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর জহিরুল ইসলাম বলেন, আমার এই প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের একটি প্রগামের প্রয়োজনীয়তা অনেক দিন ধরে করে আসছিলাম তবে নানাবিধ কারণে এটি সম্ভব হয়ে ওঠেনি। আজ এই অনুষ্ঠানটি করতে পেরে আমি ধন্য মনে করছি। এবং আমি মনে করি আজকের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাভাব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সড়ক নিরাপত্তার ওপর অনেক কিছু জানা হবে।
বিআরটি’র ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা যথাযথ প্রকৃয়ায় এখন থেকে গাড়ির ফিটনেস চালকের লাইসেন্স এবং অন্যন্ন কাজ আমরা সঠিকভাবে সম্পন্য করার অজ্ঞীকার করছি।
সমাবেশে শিক্ষার্থী যথাক্রমে রাসেল মিয়া ও সুরাইয়া খাতুন উভয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য নিরাপদ সড়কের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এই কাজটি শ্রদ্ধেও ইলিয়াস কাঞ্চন করে যাচ্ছেন আমরা তার সাথে আছি। এই সাভারের রাস্তায় কোনরকম দখল নিয়ে যদি কোন সমস্যা হয় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ঘটে আমরা শিক্ষার্থীরা ৫আগষ্টের মতো আবারও সড়কে নেমে আসব। আমরা ইলিয়াস কাঞ্চনকে সাথে নিয়ে সাভারের রাস্তা নিরাপদ করবো।
সমাবেশে স্থানীয় বিএনপি নেতা আলহাজ্ব কফিল উদ্দিন বলেন, আমি সড়ক নিরাপদ করার জন্য দীর্ঘ বছর ধরে কাজ করেছি। আমি আমাদের নেতা তারেক রহমানের সাথে কথা বলেছি। তিনি আমাকে এবং শিমুল বিশ্বাসকে বলেছেন সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে যারা কাজ করে তাদের সাথে নিয়ে অচিরেই এই দেশকে দুর্ঘটনামুক্ত করার লক্ষে প্রদক্ষেপ গ্রহন করুন। কেউ যেন বলতে না পারে পরিবহন সেক্টর আরেক মাফিয়া দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। আমরা জনবান্ধব পরিবহন সেক্টর গড়ে তোলার জন্য ইলিয়াস কাঞ্চনের সাথে আছি এবং ইলিয়াস কাঞ্চনকে সাথে নিয়ে আগামীতে আরো কাজ করে যাব। আমার ঢাকা শহরে যেকটি টার্মিনাল আছে এবং ঢাকার বাহিরে আছে প্রত্যেক টার্মিনালে আমি সড়ক নিরাপত্তামুলক সমাবেশ নিয়মিত করার জন্য অঙ্গীকার করছি। এবং এই সমাবেশ শুরু গাবতলি বাস টার্মিনাল থেকে।
সভাপতির বক্তব্যে নিসচা সাভার উপজেলা শাখার সভাপতি ইসমাইল হোসেন বলেন আজকের এই অনুষ্ঠানটি করতে পেরে আমি গর্বিতবোধ করছি। আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব আরো বেড়ে গেলো। আগামীতেও আমি আমার সংগঠনের কর্মিরা সকল কর্মসূচিতে তৎপর ভুমিকা পালন করে যাব।
সভায় সাভার পৌর, ধামরাই উপজেলা, আশুলিয়া ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নিসচা নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।