অনেক রকমের আকাঙ্ক্ষা এবং প্রত্যাশার মধ্য দিয়ে এক বিশেষ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। তাদের হাতে পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এই পরিবর্তনের কাজে বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে অপ্রয়োজনীয় কিছু দাবি। যে যেভাবে পারছে সড়ক বন্ধ করে যানবাহন চলাচলে বাধাসৃষ্টি করে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে সড়কে বসে পড়ছে। এতে দেশের প্রয়োজনীয় যেসকল দাবি আছে সেসব দাবি বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করছে বলে মন্তব্য করেছেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।
বাংলাদেশে ১১ দিন আগে গঠন হয়েছে নতুন সরকার। শুরু থেকেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীসহ সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে যে বিষয়টি বারবার আলোচনায় উঠে এসেছে, তা হচ্ছে রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার। নতুন সরকার আসার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন পক্ষ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করছে। এখানে ব্যাক্তি স্বার্থের দাবিও উঠে আসছে যেটি এই মুহুর্তে অত্যন্ত দু:খজনক। দেশের স্বার্থ রেখে ব্যাক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য যারা রাস্তায় নেমে পড়ছেন তাদের জন্য সড়কে মানুষ যেমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে তেমনি ভাবে নতুন সরকারও কিন্তু তার কাজে ডিস্টার্ব ফিল করছে।
ইলিয়াস কাঞ্চন আজ তার নিজস্ব ফেসবুক পেইজ থেকে এক ভিডিও বার্তায় বলেন, অন্তর্বর্তী কালীন সরকার গঠিত হয়েছে। দশ দিনের মতো প্রায় হয়েছে। কিন্তু আমি যা দেখছি সেটা দেখে আমার কাছে খুবই অবাক লাগছে। সবাই এখন রাস্তার মধ্যে চলে আসছে। তাদের নিজস্ব দাবী দাওয়া নিয়ে। এটা কেমন ধরনের কথা। এবং এই দাবী দাওয়া করতে গিয়ে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় যার যার মত বসে যাচ্ছে।
যানজটের সৃষ্টি করছে। মানুষের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে। এটা কি ধরনের কাজ?
এই যে, ছাত্র আন্দোলন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে এই আজকে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারটি গঠন করা হয়েছে। এখানে এই দাবিদাওয়াগুলো এখন পেশ করার বিষয়? এখন কি এদের এই দাবিদাওয়াগুলো পূরণ করার জায়গা?
সরকারের কিন্তু কিছু নিয়ম নীতি আছে যার মধ্যেই কাজ করে থাকে। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ আমি দেখেছি যে তাদের চাকরি স্থায়ী করার জন্য তারা এখন দাবি তুলছে। সরকারের নিয়মের মধ্যেই থাকে যে কিছু কিছু প্রকল্প থাকে সেই প্রকল্পর মধ্যে প্রকল্পর জন্যই কিন্তু চাকরি দেওয়া হয়। এটা বলে নেওয়া হয় যে, এই প্রকল্প যতদিন আছে তোমার চাকরি স্থায়ী ততদিন পর্যন্ত। তো সেই চাকরি তারা কিন্তু জেনে বুঝেই সেখানে চাকরি করতে আসছে।
আরও একটি বিষয় এখানে যে সরকারের সময় তারা এই চাকুরীতে ঢুকেছে সেই সরকার থাকতে তখনতো এনারা রাস্তায় এই দাবি নিয়ে নামেনি। আমাদের চাররী স্থায়ী করতে হবে বলেনি। এই সময়ে এসে এখন এই যে সুযোগ ব্যাবহার করা। সবাই দাবি জানাচ্ছে আমরাও দাবি জানাই। এসব কেন করা হচ্ছে?
আজকে অন্তর্বর্তী সরকারটা দশ দিন হলো এসেছে এই দশ দিনের মধ্যে বলেন তো, আমাদের কি ধরণের কষ্ট দিচ্ছেন আপনারা। রাস্তাঘাটে আমরা চলতে পারতাছি না যানজট সৃষ্টি করছেন। যার যা মন চাচ্ছে যার যা দাবি সেটা নিয়ে সড়কে নেমে যাচ্ছে, তো এতদিন আপনারা কোথায় ছিলেন?
এই সতেরো বছর যে সরকার ছিল সেই সরকারের সময় আপনারা দাবি-দাওয়া উত্থাপন করলেন না কেন?
এখন কি আপনারা মনে করেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা আজকে যে নতুন একটা শুভ দিনের সূচনা যেটা করলো সেটা কি আপনার নিজস্ব দাবি পুরনের জন্য? ছাত্ররা লড়াই করেছে দেশে যত রকমের অনিয়মগুলো আছে সেইগুলো যেন ঠিক করা হয়।
আমাদের মানুষের ভোটের অধিকার ছিল না। সেই ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করার বিষয় আছে ঘুষ দুর্নীতি বন্ধ করার বিষয় আছে এই কাজগুলো হলে সকলেরই উপকারের একটা বিষয় আছে। তাদেরকে সেই কাজগুলো করতে না দিয়ে এই দাবি আমার চাকরি আমার অমুক, আমার এটা, আমার সেটা এসব করে করে আসল দাবিগুলো নষ্ট করা হচ্ছে।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন,এই মুহুর্তে অন্তবর্তী সরকারের তরফ থেকে কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া দরকার। না দেয়ার কারণে
যে যার মতো করে সড়কের মধ্যে বসে যাচ্ছে। যানজটের সৃষ্টি করছে। এই সময়টার মধ্যে যে এগুলো পূরণ করা সম্ভব না। পরবর্তী সময়ে এগুলো পূরণ করার বিষয় আছে কিনা। সেই ব্যাপারেও একটা দিকনির্দেশনা অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে আসা দরকার আমি মনে করি।
না হলে এরকম ভাবে এই অরাজকতা চলতে থাকলে আমরা যারা সাধারণ মানুষ আমরা যারা চলাফেরা করি আমরা যারা কাজকর্ম করি। আমাদের কাজকর্মে বিঘ্ন সৃষ্টি হতেই থাকবে। আমি আশা করবো যে যারা এই ধরনের কাজগুলো করছেন তারা অন্তত বোঝার চেষ্টা করুন। আপনাদের দাবি দাওয়া পেশ করার সময় এটা নয়। এই মুহূর্তে নয়। রাস্তার মধ্যে বসে আমাদের অন্যান্যদের অসুবিধা সৃষ্টি করবেন না। আপনাদের দাবি দাওয়া দেওয়ার সময় আসবে সেই সময় আপনারা এই দাবি তুলে ধরবেন।
ইলিয়াস কাঞ্চন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহবান জানান, এই সব ব্যাপারে একটা নির্দেশনা দেওয়া উচিত। সরকার প্রধান যিনি আছেন তাকে এই মুহুর্তে জাতির উদ্দেশ্যে খোলাসা করা দরকার। তারা যে কাজগুলো করতে চাচ্ছেন, যেটিকে প্রাধান্য দিতে যাচ্ছেন। সেইগুলোর ব্যাপারে ওনারা যেন জাতির উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দান করেন। এবং এখন কি সম্ভব না করা। সেইগুলো যেন জাতিকে নির্দেশনা দান করেন।
আমি আশা করি এই যে এই যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। এই যে যার যার মতো করে মানুষের ভাবনা সেই ভাবনা থেকে বের করার জন্যে আমি বলবো যে প্রধান উপদেষ্টাকে এই মুহূর্তে জাতির উদ্দেশ্যে একটি বাণী দেওয়া দরকার।
আশা করি আমাকে যারা ভালোবাসেন আমার দেশবাসী এবং এই যে ছাত্র আন্দোলনে যারা রক্ত দিয়েছেন এবং বিজয় অর্জন করেছেন যে সমস্ত জনগণ এবং ছাত্ররা এই বৈষম্য দূর করার জন্য জীবন দিয়েছেন। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি আমাদের সৎ উদ্দেশ্য গুলো যেন আমরা পূরণ করতে পারি আমরা যেন বাস্তবায়িত করতে পারি। আল্লাহতালা আমাদেরকে সহায় হন।