গত ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উদ্যোগে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২২-এর কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, সরকার ২২ অক্টোবর তারিখ-কে ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। বিগত ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে জাঁকজকমপূর্ণভাবে দিবসটি উদযাপিত হয়েছে।
করোনা মহামারীর কারণে গত ০২ বছর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে স্বল্প পরিসরে দিবসটি উদযাপন করা হয়েছে। এ বছর ৬ষ্ঠবারের মতো দিবসটি উদযাপন করা হবে। তিনি আরো বলেন, প্রতিবছর নিরাপদ সড়ক দিবস উদযাপিত হলেও সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি সভায় উপস্থিত সকলকে দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণসহ কর্মসূচি প্রণয়ন ও এতদসংক্রান্ত কার্যক্রম গ্রহণের নিমিত্ত সুচিন্তিত মতামত প্রদানের জন্য আহ্বান জানান। সভায় অতিরিক্ত সচিব (এস্টেট) ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’২০২২-এর প্রতিপাদ্য নির্ধারণের জন্য বিআরটিএ হতে প্রাপ্ত প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান, বিআরটিএ, নির্বাহী পরিচালক, ডিটিসিএ, এ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন), অতিরিক্ত সচিব (বাজেট), উপসচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, উপসচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ, উপসচিব, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, উপসচিব, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, এডিসি, ট্রাফিক রমনা, ডিএমপি, চেয়ারম্যান, নিসচা ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ ২০২২-এর প্রতিপাদ্য নির্ধারণের জন্য মতামত প্রদান করেন।
এ বিষয়ে সার্বিক আলোচনান্তে উপস্থিত সকলে (ক) সড়ক আইন প্রতিপালন, দুর্ঘটনামুক্ত নিরাপদ জীবন, (খ) আইন মেনে চলি, নিরাপদে ঘরে ফিরি, (গ) ট্রাফিক আইন মেনে চলি, নিরাপদে ঘরে ফিরি (ঘ) মানিলে সড়কের আইন, নিরাপদে থাকিবে জীবন ও (ঙ) সড়ক আইন মেনে চলি, নিরাপদে ঘরে ফিরি এ ০৫ (পাঁচ)টি প্রতিপাদদের মধ্যে যেকোনো একটিকে এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা যেতে পারে মর্মে মতামত প্রদান করেন।
সভাপতি বলেন, মাননীয় মন্ত্রীর সাথে আলোচনাক্রমে উপরোক্ত প্রতিপাদ্যের মধ্যে যে কোনো একটিকে এ বছরের প্রতিপাদ্য হিসেবে চূড়ান্ত করা হবে।
সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২২’ উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন বাংলা ও ইংরেজি জাতীয় পত্রিকার ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। বিভিন্ন প্রকার ফেস্টুন, ব্যানার, প্লেকার্ড ইত্যাদি দিয়ে বিভিন্ন সড়ক দ্বীপ ও ইন্টারসেকশন সাজানো হবে। এছাড়াও ঢাকা শহরের বিভিন্ন ফুটওভার ব্রিজ সাজানো হবে। বিভিন্ন বাস টার্মিনালে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক লিফলেট/পোস্টার বিতরণ করা হবে। ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে আলোচনা ও টকশো’র আয়োজন করা হবে। প্রিন্ট মিডিয়াতে সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।
ক্রোড়পত্রে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সচিব, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, চেয়ারম্যান, বিআরটিএ’র বাণী ক্রোড়পত্রে প্রকাশ করতে হবে। এছাড়া সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, বিআরটিএ হাইওয়ে পুলিশ কর্তৃক নিরাপদ সড়ক বিষয়ে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করাও হতে পারে।
সভায় আরো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় দিবসটি উপলক্ষে শোভাযাত্রা/র্যালী এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। আলোচনা সভা/উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। দিবসের আলোচনা সভা লাইভ প্রচার করা হবে এবং ঢাকার ৪টি বাস টার্মিনালে সংযুক্ত করা হবে।
সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২২ উদযাপনের পাশাপাশি সড়কের নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সপ্তাহব্যাপী ‘নিরাপদ সড়ক সপ্তাহ’ উদযাপন করা হবে। এক্ষেত্রে ২৩ অক্টোবর থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত সকল জেলা/উপজেলায় ‘নিরাপদ সড়ক সপ্তাহ’ উদযাপন করা হবে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে নির্দিষ্ট সড়ক চিহ্নিত করে শতভাগ আইন মেনে ‘নিরাপদ সড়ক সপ্তাহ’ উদযাপন করা যেতে পারে। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকাধীন ৪টি ফ্লাইওভার/ফুটওভার ব্রিজ সংলগ্ন সড়ক যেমন- (ক) মৎস্য ভবন মোড় (খ) সাইন্সল্যাব মোড় (গ) বাংলামোটর মোড় (ঘ) মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার আবুল হোটেল সংলগ্ন মোড়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, বিআরটিএ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, নিরাপদ সড়ক চাই, ব্র্যাক, রেড ক্রিসেন্ট, বাংলাদেশ স্কাউট এর প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত ০৪টি টিম কর্তৃক সপ্তাহব্যাপী সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ এবং ঢাকার বাইরে ৬৪ জেলায় সপ্তাহব্যাপী সচেতনামূলক কর্মসূচি পালন করা হবে।
সভায় আরো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর নেতৃত্বে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি সাথে মিল রেখে ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ ২০২২-এর কর্মসূচি এবং ২৩ অক্টোবর ২০২২ থেকে ২৯ অক্টোবর ২০২২ তারিখ পর্যন্ত প্রতিটি জেলা/উপজেলায় সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির আয়োজন করা হবে। বিআরটিএ, মেট্রোপলিটন পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ, নিরাপদ সড়ক চাই, ব্র্যাক, বাংলাদেশ স্কাউট এবং সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের উপস্থিতিতে ঢাকায় ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং জেলা পর্যায়ে নূন্যতম একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সচেতনতা বৃদ্ধির নিমিত্ত কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে। এছাড়া জেলা পর্যায়ে যে কোন ১টি মহাসড়ক চিহ্নিত করে সপ্তাহব্যাপী সচেতনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
সভায় ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ এর সকল কর্মসূচি সফল করতে মন্ত্রণালয়ে, বিআরটিএ, বিআরটিসি, সওজ ডিএমপি, বুয়েট, নিরাপদ সড়ক চাই, ব্র্যাক, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বিভিন্ন উপকমিটি গঠন করা হয়।