English

23 C
Dhaka
রবিবার, নভেম্বর ১৭, ২০২৪
- Advertisement -

আজ নিসচা সংগঠনের সংগ্রাম, সাফল্য ও গৌরবের ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

- Advertisements -

আজ ০১লা ডিসেম্বর ২০২০ নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’র পথচলার ২৭ বছর পূর্ণ হয়ে ২৮ বছরে পদার্পণ করছে। নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) সংগঠনের সংগ্রাম, সাফল্য ও গৌরবের ২৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এই উপলক্ষ্যে সারাদেশ ব্যাপি ১৩০টি শাখাসহ বিদেশের শাখা সংগঠন এক যোগে করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আজ ০১ ডিসেম্বর সকল শাখা কমিটির পক্ষ থেকে বিপুল-উৎসাহ-উদ্দিপনার মধ্যদিয়ে নিসচার ২৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হবে। ইতিমধ্যে সারা দেশের নিসচা শাখার কমিটির পাঠানো তথ্যে জানা গেছে, সকল স্থানে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ হয়েছে।
‘পথ যেন হয় শান্তির মৃত্যুর নয়’ এ স্লোগানে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা)-এর জন্ম আজ থেকে ২৭ বছর আগে, ১৯৯৩ সালের ১ ডিসেম্বর। ওই বছর ২২ অক্টোবর সড়ক দুর্ঘটনায় জাহানারা কাঞ্চনের মৃত্যু হয়। এ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন অনুধাবন করেছিলেন, দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষার জন্য সবার আগে দরকার ব্যক্তিসচেতনতা। সেই কাজটি তিনি নিরলসভাবে শুরু করছেন, আজও করছেন। ইলিয়াস কাঞ্চন ও তার প্রতিষ্ঠিত নিসচার কর্মীরা আত্মনিয়োগ করেছেন সড়ককে নিরাপদ করার সংগ্রামে।
১ ডিসেম্বর, ২৮ বছরে পা দিলো নিসচা। ২৭ বছর আগে এই দিনে এফডিসি থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব পর্যন্ত নিসচার পদযাত্রা ও সমাবেশের মধ্য দিয়ে এ সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সেদিন সমাবেশে সমবেত জনতার উদ্দেশে ইলিয়াস কাঞ্চন উপস্থাপন করেছিলেন ২২ দফা প্রস্তাব। এসব প্রস্তাবের অনেক অর্জিত হয়েছে। পরিবহন চালক-মালিকদের সচেতন ও দায়িত্বশীল হিসেবে গড়ে তোলা এবং সরকার, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর উদ্দেশে কিছু করণীয় তুলে ধরেছিলেন তিনি। যার অনেকগুলো পূরণ হয়নি আজও। এরপরও বর্তমানে এসে অতীতের আয়নায় নিসচার দীর্ঘ এ আন্দোলনকে যদি মূল্যায়ন করতে হয় তাহলে দেখা যাবে—নিসচার আন্দোলন থেকে বেশ কিছু সাফল্য যুক্ত হয়েছে।
প্রথমেই যে বিষয়টি অর্জিত হয়েছে—তা হলো ‘সড়ক দুর্ঘটনা ভাগ্যের লিখন’ এমন ভ্রান্ত ধারণা থেকে মানুষ বেরিয়ে এসেছে। এখন সবাই বোঝেন, সড়ক দুর্ঘটনা কপালের লিখন নয়, কারও না কারও গাফিলতির জন্য, অনিয়মের জন্য দুর্ঘটনা ঘটছে। এটা শুধু নিয়তির বিষয় না। মূলত এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় অগ্রগতি। কেননা সমাজের কুসংস্কার, অসঙ্গতি ও সমস্যাগুলোকে নিয়তি বলার সুযোগ আর নেই। সম্মিলিত সামাজিক শক্তি নিয়ে এগুলো মোকাবিলা না করলে সমাজ এগোবে না।
সড়কে শৃঙ্খলা আনতে নিসচা শুরু থেকে একটি সময়োপযোগী আইনের দাবি জানিয়ে এসেছে। পাশাপাশি আইন করলে হবে না, আইন মানতে মানুষকে সচেতন করার জন্য সারা বছরই সড়কে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছে। নিসচার দাবি ছিল—২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে ঘোষণার। এ দাবির পেছনে যে লক্ষ্য ছিল, তা হলো—নিরাপদ সড়কের জন্য একটি দিবসকে যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা যায়, তাহলে জনগণের মাঝে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি হবে। আনন্দের খবর, সরকার সেই দাবিকে সম্মান জানিয়ে ২০১৭ সাল থেকে দিবসটির জাতীয় দিবসের স্বীকৃতি দিয়েছে। দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় সরকারিভাবে পালিত হচ্ছে। নিসচার বিশ্বাস, এতে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন আরও জোরালো হয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিনের দাবি সময়োযোগী সড়ক আইন, সেটিও পূরণ হয়েছে। এখন দরকার এ আইনের সঠিক প্রয়োগ। কিন্তু হতাশাজনক বিষয় হচ্ছে—১ নভেম্বর প্রয়োগের শুরুর দিন থেকেই আইনটি হোঁচট খেয়েছে।
আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়—যে মানববন্ধন-মিছিল থেকে শুরু হয়েছিল নিসচার পথচলা, আজ সেই মিছিলে যুক্ত হয়েছেন লাখ-লাখ কর্মী, সমর্থক, ভক্ত, শুভানুধ্যায়ী। দেশ-বিদেশের ১২০টির বেশি শাখা নিসচার। দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলায় নিসচার মাধ্যমে নিরাপদ সড়কের দাবি ধ্বনিত করেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। তরুণ-যুবকদের নিয়ে গড়েছেন কমিটি। নিরাপদ সড়ক চাইয়ের কর্মীরা নিজের জন্য নয়–আগামী প্রজন্মের জন্য, দেশের জন্য, সমাজের জন্য সড়ক নিরাপদ করতে সারাবছর কাজ করছেন। সড়কের যেখানে অসঙ্গতি, অনিয়ম ও ত্রুটি, সেখানেই প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করছেন, সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা এবং কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে চলেছেন।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের এ দীর্ঘ সময় নিসচা ও ইলিয়াস কাঞ্চন যেমন পেয়েছেন মানুষের ভালোবাসা, তেমনি পরিবহন সেক্টরের একটি অংশের বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্রের মুখেও পড়েছেন বারবার। কিন্তু দমে যাননি তিনি। লক্ষ্য অবিচল রেখে এগিয়ে চলেছেন। শুধু রাজধানী ঢাকায় নয়, নিরাপদ সড়কের জন্য ছুটে চলেছেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। দীর্ঘ এক প্রজন্মের বেশি সময় ধরে নিসচার কর্মীরা প্ল্যাকার্ড হাতে মানববন্ধন, মাইক হাতে সমাবেশ, ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকায় রাস্তার মোড়ে, সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালায়, সভা-সেমিনার প্রভৃতি জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমে রাজপথে রয়েছেন দেশব্যাপী। শুধু তাই নয়, নিসচা ড্রাইভিং মেকানিক্যাল ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে নিয়মিতভাবেভাবে দক্ষ চালক তৈরি করা হচ্ছে। দরিদ্র যুবকদের বিনামূল্যে চালক তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যেন তারা ড্রাইভিংকে পেশা হিসেবে নিতে পারেন। এছাড়া, পেশাদার চালকদেরও মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে যেন নিজেদের ছোটখাটো ভুল তারা শুধরে নিতে পারেন। নিসচা এখন পর্যন্ত এক হাজারের মতো চালক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এসব কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৮ সালে সমাজসেবায় একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চন।
আজকের শিশুরা আগামীর ভবিষ্যৎ—এ বিবেচনায় নিসচা বিগত কয়েক বছর ধরে ছাত্র-ছাত্রীদের সচেতনতার ওপর আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছে। সংগঠনের কর্মীরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সড়কে নিয়ম মেনে চলতে উৎসাহিত এবং সড়কে চলাচলের নিয়ম-কানুন শেখানোর ব্যাপারে মনোযোগ দিয়েছে।
পাশাপাশি পিটিআই ট্রেনিংয়ে অংশ নেওয়া প্রাইমারি শিক্ষকদেরও সড়ক নিরাপত্তামূলক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে যাতে এ শিক্ষকরা ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে পারেন। এভাবে নিরাপদ সড়কের জন্য প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ ও ক্যাম্পেইনে নিত্য নিয়োজিত নিসচা।
নানা সীমাবদ্ধতা ও কঠিন কিছু বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে প্রতিনিয়ত এগিয়ে চলতে হয়েছে নিসচাকে। যখনই সড়ক আইনের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন, তখনই ইলিয়াস কাঞ্চনকে অমর্যাদা ও হেনস্তার চেষ্টা করা হয়েছে। বাস টার্মিনালে চালক-যাত্রী-পথচারীদের সচেতন করতে গিয়ে অনেকবার অবাঞ্ছিতের শিকার হয়েছেন। পরিবহন সেক্টরের ক্ষুদ্র অংশ তাকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। কিন্তু তিনি কারও বিরুদ্ধে নয়, নিরাপদ সড়কের পক্ষে নিজের মহৎ মানবিক সত্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন বারবার।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
trackback
আজ নিসচা সংগঠনের সংগ্রাম, সাফল্য ও গৌরবের ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী – Nirapad Sarak Chai
3 years ago

[…] Leave a Comment / Posts / By Events […]

Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন