১৯৭৫ সালের আগস্টের মধ্যভাগে নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ইতিহাসের এই মহানায়কের বুকের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল শ্যামল বাংলার মাটি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে সপরিবারে জাতির পিতা হত্যার সঙ্গে একাত্তরের পরাজিত শত্রুদের কূট ষড়যন্ত্র আর হামলার শিকার হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শ এবং চেতনাও। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ দিয়ে এর বিচারের পথ রুদ্ধ করে আরেক কলঙ্কিত ইতিহাস রচনা করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেই অধ্যাদেশ বাতিল ও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু হয়। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া ও নানা কূটকৌশলের জাল ছিন্ন করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের চূড়ান্ত রায় শেষে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঁচ ঘাতক- সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা হয়। ২০২০ সালের ১১ এপ্রিল মধ্যরাতে দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর গ্রেপ্তার হওয়া বঙ্গবন্ধুর আরেক আত্মস্বীকৃত খুনি ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয় একই কারাগারে। পুরো জাতি এখনও প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে বঙ্গবন্ধুর বাকি পাঁচ পলাতক খুনির ফাঁসি কার্যকরের।
এই আগস্টেই ঘটেছিল জাতির ইতিহাসের আরও একটি বিয়োগান্ত ঘটনা। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো হয়েছিল ইতিহাসের ভয়াবহতম গ্রেনেড হামলা। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে চালানো ওই হামলা থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও ঝরে গিয়েছিল মহিলা আওয়ামী লীগ নেতা আইভি রহমানসহ ২৪টি তাজা প্রাণ।
আজকের কর্মসূচি: বিভিন্ন দল ও সংগঠন শোকের মাসের প্রথম দিনে আজ সোমবার দেশজুড়ে নানা কর্মসূচির আয়োজন করবে। সারাদেশের মানুষ বুকে শোকের প্রতীক কালো ব্যাজ ধারণ করবে। রয়েছে শোক র্যালি, টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার কবর ও বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে তাঁর প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, স্বেচ্ছায় রক্তদান, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা প্রভৃতি।
কৃষক লীগ আজ সকাল ৯টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে স্বেচ্ছায় রক্তদান, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করবে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে বঙ্গবন্ধু স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বালন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ বিকেল ৪টায় চন্দ্রিমা উদ্যানের মূল গেটের কাছে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার অপরাধে জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার ও চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে জিয়ার কথিত কবর অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করবে।
আওয়ামী লীগ ও সহযোগী-ভাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ছাড়াও ৫ আগস্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামালের জন্মদিন; ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শহীদ শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মদিন; ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদ দিবস; ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস এবং ২৪ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত বেগম আইভি রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করবে। ৩১ আগস্ট ছাত্রলীগ ও কৃষক লীগের আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ হবে।