রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে পরিচালনার দায়িত্ব বাংলাদেশেরই, যুক্তরাষ্ট্রের নয়। সাংবাদিকদের কাছে বুধবার সকালে পাঠানো বার্তায় এ কথা আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। সেই সঙ্গে তিনি দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিদেশি দূতদের মতামত জানতে চেয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার প্রবণতায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রদূতদের তাদের দেশের বিষয়ে প্রশ্ন করতেও তিনি সাংবাদিকদের পরামর্শ দিয়েছেন।
ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে গত মঙ্গলবার কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিকাব আয়োজিত অনুষ্ঠান ‘ডিকাব টক’-এ উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। সেখানে তিনি বাংলাদেশের নির্বাচন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বক্তব্য দেন। প্রশ্নোত্তর পর্বেও এসব বিষয় ঘুরে-ফিরে এসেছে।
বাংলাদেশ নিয়ে বিদেশি দূতের খোলামেলা বক্তব্যে এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নে দৃশ্যত অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বুধবার সকালে পাঠানো বার্তায় সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি লিখেছেন, ‘আপনারা অনুগ্রহ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে প্রশ্ন করবেন, কেন তারা তাদের নিজ দেশে এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে পারে না? দ্বিতীয়ত, প্রতিবছর প্রায় এক লাখ মার্কিন নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে নিখোঁজ হয়। এমনকি শিশুরা তাদের হিস্পানিক পিতা-মাতার সঙ্গে পুনর্মিলন থেকে বঞ্চিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের সমস্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুন, বাংলাদেশ সম্পর্কে নয়। ’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশে বার্তায় আরো লিখেছেন, ‘আমাদের এই দেশ শাসন ও এর উন্নয়নের দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের নয়। যুক্তরাষ্ট্র যদি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা চায়, তাহলে আরটি (রাশিয়ান টেলিভিশন) সম্প্রচারে কেন বাধা দিয়েছে? তারা যদি জবাবদিহিতা চায়, তাহলে কেন প্রতিবছর এক হাজারেরও বেশি নাগরিককে (বেশির ভাগ কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিক) হত্যার দায়ে মার্কিন নিরাপত্তা বাহিনী বা পুলিশের কোনো শাস্তি বা জবাবদিহিতা হয় না?’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিখেছেন, ‘আপনারা কেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে প্রশ্ন করেন না, যদি নির্বাচনপ্রক্রিয়া সুষ্ঠু হয়, তাহলে কেন তরুণ আমেরিকানরা তাদের নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করে না এবং কেন তরুণ আমেরিকানদের মধ্যে ভোট দেওয়ার হার কম? প্রতিটি নির্বাচনে কেন তাদের ভোটারদের প্রায় ২৫ শতাংশ ভোট দেয়? এটা কি একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনপ্রক্রিয়া?’
এর আগেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুম, নিখোঁজ, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত সোমবার ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা দরিদ্র ছোটখাটো দেশ। আমাদের ওপর মাতব্বরি একটু বেশি। মাতব্বরি তো দেখছেনই প্রতিদিন। আর আপনারা (সাংবাদিকরা) তাদের (পশ্চিমা দূতদের) উৎসাহ দেন। ’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা (পশ্চিমা দূতরা) প্রতিদিন একেকটা ইস্যু নিয়ে আসে। আমরা তাদের বলতাম, উন্নয়ন অংশীদার। এখন উন্নয়নের এক পয়সাও দেয় না। কিন্তু খালি পরামর্শ দিয়েই যাচ্ছে। উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করার জন্য যত ধরনের ফরমায়েশ আছে সব দিচ্ছে। অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন রকমের শর্ত দিচ্ছে। সেগুলো তো গ্রহণযোগ্য নয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ তাঁর বাস্তব ও গঠনমূলক বক্তব্যের জন্য।