২০২৪ সালের আগস্ট মাসে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বন্যার ভয়াবহতার চিত্র তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা যখন দায়িত্ব নেই, তখন সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিলো এই বন্যা। তখন ঠিক বুঝতে পারছিলাম না যে, এটা স্বাভাবিক বন্যা না। এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন জায়গার বন্যা। এটা কত গভীরভাবে মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, সেটারও কোনও ধারণা ছিল না। প্রথমে আন্দাজ করা হচ্ছিল, তাড়াতাড়ি চলে যাবে। যতই দিন যাচ্ছিল, বন্যা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। প্রথমে সবাই জীবন রক্ষায় ত্রাণ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করলো। সারা দেশে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সাহায্যের জন্য। এটা যে কত বড় বন্যা ছিল, সেটা বুঝতে পেরেছি চলে যাওয়ার অনেক পরে।
বুধবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে ঘরের চাবি তুলে দেওয়া অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের ভার্চুয়ালি চাবি হস্তান্তর করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বন্যা বেড়ে যাচ্ছিল। সবাই ত্রাণ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি, সাহায্যের জন্য সারাদেশ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এটা যে কত বড় বন্যা ছিল তা বুঝতে পেরেছি বন্যা চলে যাওয়ার অনেক পরে। বন্যায় যারা বাড়িঘর হারিয়েছিল, তাদের কোথাও যাওয়ার কোনো জায়গা ছিল না। নানাভাবে প্রস্তাব আসছিল, বাড়ির জন্য টাকা দিতে হবে। টাকা দেওয়ার ব্যাপারে আমি একটু শক্ত অবস্থান নিয়েছিলাম। টাকা দিতে গেলে এই টাকার ভাগ-বাটোয়ারা অনেক রকম হয়ে যাবে। যারা প্রাপ্য তাদের হাতে পৌঁছাবে না। তখন প্রস্তাব এসেছিল যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে করার, সেই প্রকল্পের বিষয়ে জানা ছিল না, তবে নামটা জানা ছিল। তখন ভাবলাম যে এটা কী করা যায়, পরে জানলাম এটা সেনাবাহিনী করবে। তখন স্বস্তি পেলাম, আসলে টাকাটা সঠিকভাবে ব্যবহার হবে।
তিনি বলেন, ভালো লাগছে যে, টাকাটার সঠিক ব্যবহার হয়েছে। ঘরটাও সঠিকভাবে নির্মাণ হয়েছে। অনেক সময় টাকা ব্যবহার করা হলেও গুণগতমান ঠিক হয় না। আজ গুণগতমানের ব্যাপারেও আশ্বস্ত হলাম। আমরা যে টাকা দিয়েছিলাম তার অর্ধেক টাকাতে কাজটা হয়েছে। উল্টো খবর। সাধারণত যে টাকা দেয়া হয়, তার দ্বিগুণ চাওয়া হয়। এখানে যা দেওয়া আছে তার অর্ধেক ব্যবহার হয়েছে। একটা আনন্দের খবর।
ড. ইউনূস বলেন, সহযোগিতা ও সহমর্মিতার ধারা অব্যাহত থাকলে আমরা একটি সাহসী ও স্বনির্ভর জাতি গড়ে তুলতে পারব। দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যারা বাড়ি পেয়েছেন সবাইকে অভিনন্দন। দেশের মানুষ আপনাদের পাশে দাঁড়িয়ে যে সাহস জুগিয়েছে সে সাহস সবসময় মনের মধ্যে ধারণ করবেন।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই কাজে যারা নিরলস পরিশ্রম করে গৃহহীন পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে বিশেষ করে স্থানীয় প্রশাসন, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের সদস্যগণ, এলজিইডির প্রকৌশলী ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের কর্মকর্তারা তাদের প্রত্যেককে আন্তরিক ধন্যবাদ।
প্রকল্পের কাজ সঠিক সময়ে সম্পন্ন করায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এটি একটি ছোট প্রকল্প। তিনশ ঘর নির্মাণ, কিন্তু এর মাধ্যমে সঠিকভাবে কাজ করার যে দৃষ্টান্ত আমরা স্থাপন করলাম তা আমাদের উদ্বুদ্ধ করবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ভবিষ্যতেও এধরনের দায়িত্ব দেওয়া হলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তা পালন করার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকবে। প্রকল্পের আওতায় ২৯৮টি ঘর ইতোমধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ভূমি সংক্রান্ত জটিলতায় দুটি ঘর নির্মাণ করা যায়নি, সেগুলো খুব শিগগিরই নির্মাণ হয়ে যাবে।
গৃহ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান।
ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা জেলার চারজন উপকারভোগী ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম পাটোয়ারী।