বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নকে ‘একেবারেই নন-সিরিয়াস’ আখ্যা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ‘এ প্রশ্ন উত্তর দেওয়ার যোগ্য নয়’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
মন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি খুবই নিরাশ হয়েছি। আপনাদের লেভেল অব ম্যাচিউরিটি (পরিপক্বতার পর্যায়) দেখে। আপনারা অনেক ইন্টারেস্ট শো (আগ্রহ) করেছেন, কিন্তু ইন্টারেস্টটা ম্যাচিউর হওয়া দরকার। লেখাপড়াটা একটু করতে হবে। এটা দয়া করে করবেন। ’
শুক্রবার (৭ জুন) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মে. মাহবুব হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।
‘অর্থমন্ত্রী আপনি সজ্জন ব্যক্তি, তাহলে বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ বাড়াতে কেন গোঁজামিল হলো? আর একটি বিষয় হলো আপনি বলছেন—আমাদের রিজার্ভ এই অর্থবছর শেষে প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে, যেটা এখন প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। আপনি রিজার্ভ বাড়াবেন কীভাবে? আপনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে টাকা না ছাপিয়ে ডলার ছাপানোর দায়িত্ব দিয়েছেন কি না?’ এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘এটা একেবারেই নন-সিরিয়াস প্রশ্ন। ঠিক আছে…। এ প্রশ্ন উত্তর দেওয়ার যোগ্য নয়। আমি খুবই নিরাশ হয়েছি। ’
এ পর্যায়ে ওই সাংবাদিক কিছু বলতে গেলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আ রে বাবা আমি আপনার উত্তর দিচ্ছি। আমাকে আটকাচ্ছেন কেন, আপনাকে তো আমি আটকাইনি। আপনাকে তো ইচ্ছা মতো বলতে দিয়েছি। এখন আমারটা তো শুনতে হবে আপনাকে। ’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি অতি সরলীকরণ জিনিসটা খুবই রপ্ত করে ফেলেছেন। এগুলো তো একেবারে ওভার সিমপ্লিফিকেশন (অতি সরলীকরণ)। এইভাবে ইকোনমি চলে নাকি? হ্যাঁ, আমরা সব ছোট হয়ে গেলাম, আমাদের সব শেষ। কোথায়? আরও একটু পড়ে-টড়ে আসবেন। এইভাবে অতি সরলীকরণ করবেন না একটু ম্যাচিউরিটি নিয়ে আসেন। ’
আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘বাজেট বক্তব্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় কোনো বার্তা দেখিনি। আর্থিক খাতের দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিষয়ে আজকে আপনি কী বলবেন? কেন বার্তা দিচ্ছেন না, আপনার ওপর কি কোনো চাপ আছে?’ জবাবে অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেন, ‘আমরা তো বলছি খোলাখুলি। বিফোর দ্য ওয়ার্ড, বিফোর আওয়ার অডিয়েন্স, বিফোর আওয়ার পিপল (সবার সম্মুখে)। আমরা তো কোনো রাখঢাক করিনি। তো আপনি খালি ঘুরে-ফিরে ওই একই কথায় যাচ্ছেন, কেন? এটা তো বুঝতে পারলাম না। এটা কী ধরনের প্রশ্ন?’
তিনি বলেন, ‘কীভাবে প্রশ্ন করে, এগুলো তো শিখতে হবে আপনাদের। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে। কারণ এটা কোনো জার্নালিজম না। খালি এক কথায় ঘুরে ফিরে বলেন এবং অতি সরলীকরণ। এভাবে চলে নাকি? সমাজ, সংসার এভাবে চলে? কোথাও চলে না? এগুলো (বাজেট বক্তব্যের বই হাতে নিয়ে) দেখেন, দেখে একটু শেখেন। তাহলে আমাদেরও কাজ করতে সুবিধা হবে। ’
পণ্যের দাম কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়, কিন্তু মাঠ পর্যায়ে সমন্বয়ের অভাবে কাঙ্ক্ষিতভাবে প্রতিফল ঘটে না। বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো হবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে কাজ করার চেষ্টা করছি এবং সাংবাদিকরাও তো আমাদের সাহায্য করছেন। এটা কী ধরনের প্রশ্ন করলেন, সমন্বয় করা হবে কি না। অবশ্যই করা হবে। ’
‘প্রস্তাবিত বাজেটে এমপিদের গাড়ি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু আইনে এখনো আছে। আইন কবে, কখন সংশোধন করবেন?’ প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কবে, কখন করবেন এটা কেউ বলে নাকি? আপনি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলেন, কবে করবেন এটা, এ রকম হয় না। আইনটা সংশোধন করতে হবে। হ্যাঁ বলেছি তো করার জন্য। ’
তিনি বলেন, ‘একটা জিনিস বলতেই হবে, লাস্টের প্রশ্নটা ভালো প্রশ্ন ছিল। সিরিয়াস প্রশ্ন। কিন্তু আমি দেখলাম বেশিরভাগই হলো খুবই ইম্যাচিউরড। পড়েননি, এই যে বইটা (বাজেট বক্তব্যের বই হাতে ধরে) দিয়েছি আমরা, বইটা পড়েন। ’
এর আগে বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বাজেটের আকার সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপির ১৪.২ শতাংশ। এটি চলতি বাজেটের তুলনায় ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। টাকার অংকে বাড়ছে ৩৫ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর ছিল দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা।
নতুন বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ধরা হয় দুই লাখ ৮৩ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা।
বাজেটে জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পরে তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়। মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বাজেটে।