বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেরে গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। ওই দিন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
এবার পাল্টা অভ্যুত্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
ক্ষমতাচ্যুতরা আবার বিভিন্ন জায়গায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, “এমন কিছু করবেন না যাতে আপনাদের জীবন বিপন্ন হয়। কারণ এদেশের জনগণ এখনও আপনাদের গ্রহণ করতে আসেনি।”
সোমবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) আহত আনসার সদস্যদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “লোক জড়ো করুক আর যাই করুক, এমন কিছু করবেন না যাতে আপনাদের জীবন বিপন্ন হয়। কারণ এদেশের পাবলিক এখনও আপনাদের গ্রহণ করতে আসেনি। আমি বরং মনে করি আপনারা আপনাদের পার্টি রিঅর্গানাইজড করেন। পার্টির অনেক অবদান আছে বাংলাদেশে। এটা আমরা ডিনাই করতে পারি না। পার্টিকে রিঅর্গানাইজড করেন, একটা পলিটিক্যাল পার্টির মতো থাকেন। ইলেকশন এলে কনটেস্ট করবেন। জনগণ ভোট দিলে ভোটে যাবেন।”
তিনি বলেন, “এদেশের লোক এত তাড়াতাড়ি ভুলে নাই। সময় দেন হয়তো ভুলে যাবে। এত তাড়াতাড়ি ভুলে নাই কারণ যাকে নেতা ধরছিলেন, সেই নেতারা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। যাকে ধরছে তাকে আমরা বাঁচাতে পারছি না। অনেক নেতাকে অনেকে বাঁচিয়েছে। আমরা জানি কে কোথায় আছে। কিন্তু ওটা না করে আপনারা বরং পার্টিকে, এটা অনেক বড় পার্টি, আই হ্যাভ আ লট অব রেসপেক্ট ফর আওয়ামী লীগ। এক সময় আমাদের মতো বাঙালিদের ভরসার জায়গা ছিল এই পার্টি। আপনারা আসুন, যারা রেগুলার (রাজনীতি) করতে চান। এখানে মারামারি করে কোনও লাভ নাই। আরও কিছু লোকের মৃত্যু আমরা চাই না। অলরেডি চারশ থেকে পাঁচশ তারও বেশি মারা গেছে উভয়পক্ষে। পুলিশের এই অবস্থা হয়েছে। আনসারের এই অবস্থা হয়েছে।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমরা যদি উসকানি দিতাম তাহলে আপনারা টিকতে পারতেন না, আর্মির ফায়ারে। আমরা আর্মিকে মানা (নিষেধ) করেছি ডোন্ট ওপেন ফায়ার। কারণ কাকে মারবেন আপনি? আপনারা এই পুলিশকে দিয়ে কাকে মারিয়েছেন? পুলিশকে দিয়ে মারিয়েছেন আপনার সন্তানকে। এটা করবেন না। অনুরোধ করছি প্ররোচণায় আইসেন না। ব্যক্তিগত স্বার্থে আপনারা এত বড় দলকে নষ্ট করবেন না। এটা আমাদের প্রাইড ছিল। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল। নষ্ট করবেন না। এটা নষ্ট করবার কোনও অধিকার আপনাদের নাই। এটা বাংলাদেশের সম্পত্তি।”
পাল্টা অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “আর এই যদি স্বপ্ন কেউ মনে করে যে এটা করে আবার কাউন্টার রেভ্যুলুশন করে আসবেন। কাউন্টার রেভ্যুলুশন করতে হলে আপনাকে আবার হাজার হাজার লোকের রক্ত বহাইতে হবে। যদি আপনারা সেই দায়িত্ব নিতে চান তাহলে নেন। আমার কিছু করার নেই।”
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকারের পতন প্রসঙ্গেও কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “আমাদের যে ইয়ং জেনারেশন, এরা করেছে। কোনও পলিটিক্যাল পার্টি করে নাই। দে হ্যাভ গিভেন দেয়ার লাইফ। যেটা আপনারা কোনওদিন দিতে পারতেন না। বুক পেতে দাঁড়িয়ে আছে পুলিশের গুলি খাওয়ার জন্য। তাদের দুঃখ নাই। দে আর অল স্মাইলিং। এরা যতদিন আছে, আমাদের কথা বাদ দেন, আমরা দৌড় দেব। এরা যতদিন আছে, এরা দৌড়াবে না। দে উইল ফেস ইউ। সো প্লিজ, আমি অনুরোধ করছি। আমি একজন সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে বলছি, দয়া করে দেশটাকে স্বাধীন রাখেন।”