English

17 C
Dhaka
রবিবার, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৫
- Advertisement -

নির্বাচন কমিশনের সংস্কার সময়ের দাবি, কিন্তু সংস্কার করতে পারবেন কি: ইলিয়াস কাঞ্চনের প্রশ্ন

- Advertisements -

৮ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে রাষ্ট্র সংস্কার ফোরামের উদ্যোগে একদিনে ৩০০ আসনে নির্বাচন নয় এই স্লোগানে নির্বাচন সংস্কার বিশ্লেষন শিরোনামে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

রাষ্ট্র সংস্কার ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী নুরুল কাদের সোহেলের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। আরো বক্তব্য রাখেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমিনুল করিম (অবঃ), সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন, নিরাপদ সড়ক চাই’র চেয়ারম্যান ও চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ নাজিম উদ্দীন (অবঃ) সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এ বি এম ওয়ালিউর রহমান খান।

আলোচসা সভায় নির্বাচনে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কথা বলেন,  নিরাপদ সড়ক চাই’র চেয়ারম্যান ও চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, আপনার ভোট এবং আমার ভোট এবং একজন অশিক্ষিত মানুষের ভোটের মূল্য একই। অশিক্ষিত কত মানুষ আছে সেটাও আমাদের কিন্তু জানা নেই। তারা যদি ভোট দিতে পারে তাহলে অবশ্যই তার অধিকার আছে নির্বাচনে দাঁড়ানোর।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, স্বৈরশাসকের আগে একটি নিয়ম নীতি ছিল। সেটি ছিল না ভোট।আমার কোন প্রার্থীকে পছন্দ হয়নি আমি তাকে না ভোট দিলা। এবং সেটি যদি ৫২% না পড়ে তাহলে সেই জায়গায় আবার নতুন করে ইলেকশন হবে। এরকম একটা নিয়ম ছিল আগে। স্বৈরশাসক এসে সে নিয়ম বন্ধ করে দিয়েছে। আমি সেই আগের পদ্ধতির দাবি জানাচ্ছি। সেই পদ্ধতিটা অবশ্যই থাকতে হবে। আমার অধিকার থাকতে হবে যে আমি তাকে ভোট দেবো কি দেব না। একটা নির্বাচনের মধ্যে যারা যারা দাঁড়ালো কাউকে আমার পছন্দ হয়তো নাও হতে পারে। তারপরেও কি আমি জোর করে সেখানে ভোট দেবো? সেই জন্য আমার এই অধিকার আমার রাইট এটা আমার থাকতে হবে।

পাশাপাশি আমি বলব প্রায় সময় আমি দেখেছি, একটা election হওয়ার পর কারচুপি হলো নানান কিছু হলো। তারপরে যিনি ক্ষতিগ্রস্ত হলেন তিনি যখন মামলা করলেন সেই মামলা এতো দীর্ঘসূত্রিতা করা হয়, সে মামলা চলতে চলতে তার মেয়াদ চলে যায় কিন্তু তার মামলা শেষ হয় না।

এইরকম যদি ব্যবস্থা থাকে যে একটা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ সে যদি মামলা করে তার যদি নিজের অধিকার রায়ের প্রতিষ্ঠিত না করতে পারে, তাহলে মামলা করেই বা কি লাভ?

একারণে এখানে থাকতে হবে মামলা যত দ্রুত সম্ভব ফয়সালা করা দরকার। আমি মনে করি একটা সীমা দিয়ে দেওয়া দরকার। এক থেকে দুই মাসের মধ্যে সে মামলার নিষ্পত্তি করে তার রায় প্রদান করতে হবে। যেন সেই জায়গায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তারা যেন সেই ক্ষতি থেকেও উত্তরণ করতে পারে।

আরেকটি জিনিস যেটি আতঙ্ক বর্তমানে, সেটি হলো নির্বাচন কমিশনের সংস্কার বলেন, অমুক বলেন, তমুক বলেন, সব ঠিক আছে। আমরা সবাই মিলে এবং নির্বাচন কমিশনের জন্য, সংস্কারের জন্য যে কাজগুলো হয়েছে প্লাস আমরা আরো অনেক কিছু আমরা দেবো। কিন্তু এই কাজটা বাস্তবায়ন আসলে কারা করবে? আপনারা যারা যারা এই উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যে আছেন। যারা বর্তমানে রাষ্ট্রকে পরিচালনা করছেন তাদের কি যোগ্যতা আছে? আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন রইলো তাদের কি যোগ্যতা আছে? এই ইলেকশন কে পরিপূর্ণভাবে, সুন্দর ভাবে পরিচালনা করার যোগ্যতা কি ওনাদের আছে? আমি কিন্তু মনে করি না।
আপনি সংস্কার করেন, যাই করেন না কেন, নির্বাচন পরিচালনার যে বিষয়টি সেটি যদি ঠিক না হয় তাহলে আপনি কিভাবে আশা করবেন যে, একটা নির্বাচন, সুন্দর, সুষ্ঠ, নির্বাচন হবে?

একজন উপদেষ্টা সালেহ আহমেদ সাহেব উনি বলেছেন, দ্রব্যমূল্য আমরা কমাতে পারবো না নতুন করে যিনি আসবেন যারা নির্বাচিত সরকার যারা আসবে তারা এসে আপনার ওই দ্রব্যমূল্য নাকি কমাবে। তারা যদি দ্রব্যমূল্য কমায় ইলেকশন হওয়ার পর তাহলে ইলেকশন আপনারা কিভাবে করবেন? এটা জাতিকে জানাতে হবে।

বলতে হবে যেখানে আইনের কোনো শাসক এখনো পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমি শুরু থেকেই বলে আসছিলাম একটি কথা, পুলিশের যে ব্যাপারটি সেখানে যত দ্রুত সম্ভব পুলিশকে রিক্রুট করেন। আজকে ছয় মাসের মধ্যে আমরা নতুন করে পুলিশ প্রশাসনকে পেতাম। কিন্তু সেই স্বৈরশাসকের পুলিশরা এখনো পর্যন্ত রয়ে গেছে। এবং আমলাতন্ত্রের মধ্যে সকল জায়গায় সেই স্বৈরশাসকের দূষণটা রয়ে গেছে। আর আপনারা বলছেন একটা ইলেকশন হবে সুন্দর ইলেকশন। আপনারা তো খুব বেশি মনে মনে কলা খাচ্ছেন।

আগে যারা ইলেকশন করবে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন তারা করতে পারবে কিনা?

ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন…

আলোচনা সভায় বক্তারা নির্বাচন সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের বিভিন্ন ধারা, সুষ্ঠ নির্বানের পথে বাধা উল্লেখ করে বেশকিছু দাবি উত্থাপন করেন। সেগুলো মধ্যে-

১। রাষ্ট্রপতি ৫জন বিভিন্ন পেশার সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠন
২। সম্পূর্ণ স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনে সরকারের হস্তক্ষেপ মুক্ত রাখার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সচিব নির্বাচন কমিশন বিভাগ হতে পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ হবেন বা কমিশন নিয়োগ।
৩। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জেলা রিটানিং অফিসার এবং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সহকারি রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নির্বাচন থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত রাখা।
৪। তফসিল ঘোষণা হলে নির্বাচনকালীন সময়ে জেলার ক্ষেত্রে একমাত্র জেলা প্রশাসক ব্যতিত বাকী সকল কর্মকর্তাগণ জেলা নিবাচন কর্মকর্তার অধিনভুক্ত এবং উপজেলার ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যতীত উপজেলার সকল কর্মকর্তাগণ উপজেলা অফিসারের অধীনস্থ হবেন।
৫। নির্বাচনের স্বার্থে জেলা নির্বাচন অফিসার জেলার অধিনভুক্ত যে কোন উপজেলার যেকোনো কর্মকর্তাকে বদলি করতে পারবেন।
৬। নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন এমন কোন কর্মকর্তা তিন বছর কোন উপজেলায় কর্মরত থাকলে তাকে অবশ্যই অন্য কোন উপজেলায় বদলি করবেন। তবে পারিবারিক বিশেষ কারণে প্রয়োজন সাপেক্ষে জেলা প্রশাসক চাইলে পরবর্তীতে তাকে ঐ উপজেলার পুনঃ বদলি করতে পারবেন।
৭। জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার ম্যাজেস্ট্রি ক্ষমতা প্রাপ্ত হবেন।
৮। নির্বাচন দায়িত্বে অবহেলা বা অনিয়মের কারণে প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং যে কোন সরকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে যে কোন শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ক্ষমতা প্রাপ্ত হবেন। নির্বাচনে অংশ গ্রহণকারী কোন ভুক্তভোগী প্রার্থী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার বিচারে সন্তুষ্ট না হলে আদালতের সরণাপন্ন হতে পারবেন।
০৯। নির্বাচন দায়িত্ব অবহেলা বা অনিয়মের ক্ষেত্রে কর্মকর্তা কর্মচারীদের শাস্তির নীতিমালা তৈরী করতে হবে।

নির্বাচনে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা:
সংসদ সদস্য প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক/ দাওরায়ে হাদিস পাশ থাকতে হবে। উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে অবশ্যই শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক/ দাওরায়ে হাদিস পাশ থাকতে হবে। ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক করা যেতে পারে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কারঃ
(যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত। তাই সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন কমিশন আইনগত হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাখে)
১। রাজনৈতিক দলগুলোতে নির্বাচন কমিশনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রতিটি পদে ডেলিকেট ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন করা।
২। রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন থেকে একটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করে দেওয়া।এই কমিটি রাজনৈতিক দলটির গঠনতন্ত্র মোতাবেক ডেলিকেট নির্বাচন করে ভোটের ব্যবস্থা করবে।

পোষ্টার নিষিদ্ধকরণের দাবীঃ

১। শীতকালীন সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় পোষ্টার ঝুলিয়ে রাখার পর কয়েক ঘন্টার কুয়াশায় ভিজে মাটিতে পড়ে যায়।
২। প্রভাবশালী প্রার্থীদের সমর্থকগণ নিরীহ প্রার্থীদের পোষ্টার ছিড়ে ফেললেও নির্বাচন পরবর্তী ভয়ে নিরীহ প্রার্থীগণ প্রতিবাদ করতে পারেন না। এভাবেও বৈষম্যের স্বীকার হতে হয়।

৩। লক্ষ লক্ষ্য পোস্টার মাটিতে রাস্তায় পড়ে থাকায় পরিবেশ ও নষ্ট হয়।
৪। অনেক প্রার্থীরা সরকারিভাবে নিষিদ্ধ থাকার পরও পোস্টারে পলিথিন ব্যবহার করেন যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

৫। কোটি কোটি ডলারের কাগজ কিনতে হয় বিদেশ থেকে । যার ফলে রাষ্ট্রের ডলার সংকট হয়।
৬। কাগজের ব্যাপক চাহিদার ফলে শিক্ষা ক্ষেত্রে খাতা এবং বইয়ের দাম বেড়ে যায়।
৭। উন্নত দেশগুলোতে নির্বাচনে এরকম পোস্টারের প্রচলন নেই।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন