শনিবার ছিল বাঙালির উৎসবের দিন। নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে দুই যুগের বোনা স্বপ্নজয়ের আনন্দ মেতেছে বাংলাদেশ। খরস্রোতা পদ্মার বুক চিরে হয়েছে সেতু। এমন ক্ষণে দক্ষিণের ঘরে ঘরে যেন ঈদের আনন্দ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে সবখানে জয়গান, একই আলোচনা। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন, বাঙালির স্বপ্নের উন্মোচন।
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সাহস, সক্ষমতা, মর্যাদা ও অহংকারের প্রতীক। এ সেতুর উদ্বোধনে উচ্ছ্বসিত দেশবাসী। এ স্বপ্নযাত্রার লড়াইয়ে মূল কারিগর বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিও আজ উদ্বেলিত। একমাত্র মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে উদ্বোধন করেছেন গর্বের এ সেতু।
উদ্বোধনের পর সেতুর ওপর দিয়ে পদ্মা পাড়ি দেওয়ার পথে কয়েক মিনিটের জন্য থামেন তিনি। প্রমত্তা পদ্মার মাঝে সেতুতে নেমে কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যান অন্য এক ভুবনে। পাশেই ছিলেন তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। কাজেকর্মে, দায়িত্বে অনেক বড় হয়ে গেলেও মায়ের কাছে সেই ‘পুতুলই’ রয়ে গেছেন তিনি। রাষ্ট্রের বড় দায়িত্ব, ষড়যন্ত্র, নানা প্রতিকূলতা, পদ্মার বাস্তবতা ভুলে সেখানে তৈরি হয় মাতৃত্বের পরম আবহ।
আনন্দ-উচ্ছ্বাসের এ মুহূর্তটি ফ্রেমবন্দি করছিলেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তার ছবি তোলায় বাগড়া দেয় বাতাসের হিল্লোল। পেছন থেকে মাথার চুলগুলো চোখে ওপরে এসে পড়ছিল। মায়ের চোখ এড়ায়নি তা। দ্রুত নিজের মাথা থেকে ক্লিপ খুলে মেয়ের চুল ঠিক করে দেন প্রধানমন্ত্রী। পরম মমতাময়ী মা তার সন্তানকে যত্ন করেন।
এমন দৃশ্যের একটি ভিডিও এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অনেকে এটি শেয়ারও করছেন। অনিন্দ্য চট্টপাধ্যয়ের লেখা ও অভিজিৎ সিংয়ের কণ্ঠে গাওয়া ‘মা’ গানটি। আমি তোমার ছায়ায় ছায়ায় থাকি মা/আমি তোমার চোখের তারায় বাঁচি মা/আমি তোমার মায়ায় মায়ায় থাকি মা/আমি তোমায় হাওয়ায় আবার ডাকি মা/আমি তোমায় ভালোবাসায় মুড়ে, রাখি মা..।
দেশের প্রধানমন্ত্রীর মাতৃসুলভ আচরণ বাঙালির চোখে পানি এনে দিয়েছে। কারণ পুতুলকে চুল বাঁধার ক্লিপ দিলেও জাতিকে দিয়েছে বিধ্বংসী পদ্মার ওপর একটি সেতু। এ তো শুধু সেতু নয়, বাঙালি দুর্বার গতি উন্নয়নের পথে ছুটে চলা।