আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে দায়ের করা আড়াই হাজার হয়রানিমূলক গায়েবি মামলা এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে বাকি যত গায়েবি মামলা চিহ্নিত করা সম্ভব হবে, সেগুলো প্রত্যাহার করা হবে।’
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিকালে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সাইবার সিকিউরিটি আইনে দায়ের করা স্পিচ অফেন্স সংক্রান্ত সব মামলা দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘সাইবার সিকিউরিটি আইনে দায়ের করা স্পিচ অফেন্স সংক্রান্ত সব মামলার মধ্যে ৩৩২টি মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে। ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এরই মধ্যে ১১৩টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। একইসঙ্গে সাইবার সিকিউরিটি আইন সংস্কারেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তা নিয়ে তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কাজ করছে।’
হয়রানিমূলক মামলার বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশের ২৫ জেলায় আড়াই হাজার রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বা গায়েবি মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব মামলায় লাখ লাখ মানুষকে আসামি করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘গায়েবি মামলা চিহ্নিত করতে আমরা চারটি ভাগে ভাগ করেছি। প্রথমত, মামলাগুলো পুলিশ করেছে কিনা। দ্বিতীয়ত, এসব মামলার বেশির ভাগই ছিল বিস্ফোরক ও অস্ত্র আইনে, পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়া। তৃতীয়ত, এসব মামলায় অনেক বেশি আসামি অর্থাৎ অজ্ঞাতনামা হাজার হাজার আসামি থাকে। চতুর্থত, বিরোধী দলগুলোর বড় কোনও সমাবেশের আগে বা পরে এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে তিনটি ভুয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে করা মামলাগুলো আমলে নেওয়া হয়েছে। এসব প্রবণতাকে আমলে নিয়ে ২৫ জেলায় ২ হাজার ৫০০ মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে। আশা করছি আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে বাকি মামলাগুলো প্রত্যাহার করা সম্ভব হবে।’
উচ্চ আদালতে রাজনৈতিক বিবেচনায় বিচারক নিয়োগ দেওয়া প্রসঙ্গে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘‘এখন থেকে বিচারক নিয়োগ হবে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও দলনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে। সেজন্য বিচারক নিয়োগে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ-২০২৫ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। একইসঙ্গে বিচারপতি নিয়োগে ছয় সদস্যের ‘সুপ্রিম জুডিসিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল’ গঠন করা হবে।’’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘দেশের আদালতগুলোতে আইন কর্মকর্তা বা জিপি-পিপি নিয়োগে একটা স্থায়ী প্রসিকিউশন সার্ভিস করা হবে। এছাড়া ফ্যাসিস্ট সরকারের দুর্নীতিবাজ ও খুনিদের বিচার কার্যক্রম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পূর্ণগতিতে চলছে। প্রয়োজনে এর গতি আরও বাড়ানো হবে। সেজন্য ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করা হবে।’
বিচার আগে না নির্বাচন আগে—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘নির্বাচনের সঙ্গে বিচারের কোনও সম্পর্ক নেই।। কোনও বিরোধ নেই। বিচারের কাজ চলবে আদালতে। আর নির্বাচন হবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে।’