প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, বিএনপি দেশের অন্যতম প্রধানতম রাজনৈতিক দল। তারা যেটা চাচ্ছে সে ব্যাপারে আমাদের কোনো রকম বাধা নেই। তবে তাদের রাজনৈতিক কৌশলে হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার আমাদের নেই। আমরা কাউকে ধরে-বেঁধে নির্বাচনে আনবো না।
সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, আমরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। সক্রিয় অংশগ্রহণমূলক চাই। কেন চাই? সক্রিয় প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হলে ভারসাম্য সৃষ্টি হয়। দলগুলোই সারাবিশ্বে এ ভারসাম্য সৃষ্টি করে। সবার প্রতি আন্তরিকভাবে উদাত্ত আহ্বান থাকবে আপনারা আসেন, সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখেন ও সহায়তা করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে নির্বাচনটা অধিক অংশগ্রহণমূলক হবে। এখন বিএনপির যে রাজনৈতিক কৌশল, আমরা কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের কৌশলের ওপর হস্তক্ষেপ করবো না, করতে পারি না, সে এখতিয়ারও আমাদের নেই। কিন্তু আমাদের ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত রয়েছে, সে দায়িত্বের পথে আমরা এগিয়ে যাবো। কাল যদি আমাকে উচ্ছেদ করে দেন, হবে। সেটার জন্য আমি তো মর্মামত হবো না।
তিনি বলেন, আজকে দুটি দলের সঙ্গে সংলাপ হলো। এ অর্থে সংলাপ শেষ হলো। সিদ্ধান্ত গ্রহণে যেন সহায়ক হয় সেজন্যই সংলাপ করেছি। সংলাপ করে আমরা লিখিত আকারে সিদ্ধান্ত জানিয়েছি তাদের। ইভিএম নিয়েও বৈঠক করেছি। ইভিএম নিয়ে একটা সিদ্ধান্তও নিয়েছি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। আমরা আমাদের নিজস্ব বিবচেনায় দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে ৩০০, ১০০, ১০ বা ২০টি নয়, আমরা একটা যৌক্তিকভাবে ব্যালট পেপারে ১৫০ আসন ও ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দলগুলোর লিখিত বক্তব্য আছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইভিএম নিয়ে অনেকের বিশ্বাস আছে, অনেকের নেই। তবে আমাদের সিদ্ধান্ত আদৌ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কি না, সেটা নির্ভর করবে পর্যাপ্ত ইভিএম মেশিন পাওয়া না পাওয়ার ওপর। কারণ, এ মেশিনের বেশিরভাগ পার্টস আসবে বিদেশ থেকে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা শুধু দলকে নয়, সরকারকেও সংলাপ থেকে আসা মতামত জানিয়েছি। কেননা, দলগুলো কী বলছে তা সরকারেরও জানা উচিত। সরকার কিন্তু কোনো দলের নয়। সেই বিভাজনটাকে মাথায় রেখে আমরা সরকাকে জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় বিরোধীদলগুলো। সেটাও আমরা জানিয়েছি। ভোটার তালিকা আগামী বছর মার্চ মাসে চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করবো। রোডম্যাপ দুই সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্তভাবে জানাতে পারবো।
ইভিএম নিয়ে আমরা খুব খুঁটিনাটি কাজ করছি। ইভিএমের মধ্যে কোনো ধরনের কারচুপি, এটা-সেটা করা সম্ভব কি না, আমরা তা খতিয়ে দেখছি। কারচুপির বিষয় কিন্তু এখনো পাইনি। ব্যক্তি শনাক্তকরণের পর আঙুলের ছাপ দিলেই ছবি ভেসে আসবে। এরপর ব্যালট ওপেন হবে। ৪০ সেকেন্ড থাকবে। এর মধ্যেই ভোট দিতে হবে।
সিইসি বলেন, ইভিএমে ভোট নেওয়ার ক্ষেত্রে একটা অসুবিধা কেউ কেউ লক্ষ্য করেছেন। সেটা হলো- একজন ভোটার বুথে দাঁড়িয়ে থাকার সময় অন্য কেউ যদি ওই ভোটারকে বলেন- ‘আপনি যান, ভোটটা আমি দিয়ে দেবো’- সেই সংকটের বিষয়টিও আমাদের মাথায় আছে। এজন্য আমরা সিসি ক্যামেরা দেবো। আমরা কিন্তু কঠিন দায়িত্ব অর্পণ করবো প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের ওপর। কেউ যদি বৈধ বা অবৈধভাবে ভোট বাধাগ্রস্ত করে তবে তাৎক্ষণিক ভোট বন্ধ করে ওই ব্যক্তিকে বের করে দেওয়া হবে। প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিজে না পারলে পুলিশ ডেকে বের করে দেবেন। তিনিও পারলেন না, পুলিশও পারলো না, তখন ওই কেন্দ্রে ভোট বন্ধ করে দেওয়া হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে সিইসি বলেন, ইসি একা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারবে না। দলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। ইসির ওপর ছেড়ে দিলে একার পক্ষে সম্ভব না-ও হতে পারে, যদিও আমরা চেষ্টা করবো।