করোনা স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুরসণ করেই আগামীকাল বুধবার থেকে জাতীয় সংসদের বাজেট (ত্রয়োদশ) অধিবেশন শুরু হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে অধিবেশন হবে সংক্ষিপ্ত। যা চলতে পারে ১২ কার্যদিবস। একজন সংসদ সদস্য ৩ থেকে ৪ কার্যদিবস অধিবেশনে যোগ দেবেন। যোগদানের জন্য তাদের করোনা নেগেটিভ সনদ থাকা বাধ্যমূলক। যার মেয়াদ থাকবে সর্বোচ্চ তিন দিন। অর্থাৎ সংসদে যোগদানের জন্য তাদের একাধিকবার নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজন পড়বে।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, সংসদ অধিবেশনে যোগদানের জন্য ইতোমধ্যে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে। জাতীয় সংসদ মেডিক্যাল সেন্টারে সংসদ সদস্যরা ছাড়াও অধিবেশনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নমুনা পরীক্ষা চলছে। দুই ডোজ করোনা ভ্যাকসিন (টিকা) নিলেও এই নমুনা পরীক্ষা করাতে হবে। আগেই জাতীয় সংসদের হুইপের দপ্তর থেকে সংসদ সদস্যরা কে কোন দিন যোগদান করবেন তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বয়স্ক ও অসুস্থ সদস্য অধিবেশনে যোগ দিতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। আর অধিবেশন কক্ষে গত ৭টি অধিবেশনের ন্যায় নির্ধারিত দূরত্ব বজায় রেখে আসন বণ্টন থাকছে। সংসদ চলাকালীন দর্শনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। তবে বাজেট ডকুমেন্ট সংগ্রহের জন্য ৩ জুন সংসদে প্রবেশের সুযোগ পাবেন।
সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম সাংবাদিকদের জানান, করোনা পরিস্থিতিতে ঝুঁকি ও আতংক থাকলেও তা মোকাবেলার জন্য কঠোর সতর্কতাও অবলম্বন করা হচ্ছে। বাজেট অধিবেশন থেকে যাতে নতুন কেউ সংক্রমিত না হন, সে বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অধিবেশন কক্ষে আসন বণ্টন আগের মতোই থাকছে। নির্ধারিত দূরত্ব বজায় রেখেই সদস্যরা বসবেন। নির্ধারিত সময় পার হলেই অধিবেশনে যোগদানের জন্য নমুনা পরীক্ষা করোনা নেগেটিভ সনদ নিতে হবে।
করোনা সতর্কতার অংশ হিসেবে অধিবেশন সংক্ষিপ্ত করার কথা জানানো হয়েছে। এবারো অধিবেশনের আগে সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হচ্ছে না। করোনাকালের এই দ্বিতীয় বাজেট অধিবেশন ১২ দিন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামীকাল বুধবার বিকেল ৫টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হবে। ওইদিন চলতি সংসদের সদস্য আবদুল মতিন খসরু ও আসলামুল হকের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ও গ্রহণের পর অধিবেশন মুলতবি করা হবে।
পরের দিন বিকেল ৩টায় বাজেট প্রস্তাব ও অর্থ বিল উত্থাপন করা হবে। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট হবে অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের তৃতীয় বাজেট এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ত্রয়োদশ বাজেট।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বাজেট প্রস্তাব উত্থাপনের পর দুইদিন বিরতি দিয়ে ৬ জুন থেকে বাজেট আলোচনা শুরু হবে। ওইদিন থেকে বেলা ১১টায় অধিবেশন শুরু হবে। ৭ জুন সোমবার সম্পুরক বাজেট পাসের পর অধিবেশন আবারো মূলতবি করা হবে। এরপর টানা ৬দিন বিরতি দিয়ে আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনা ১৪ জুন শুরু হবে। এই আলোচনা চলবে ১৫, ১৬, ১৭ ও ২৮ জুন। সাধারণ আলোচনা শেষে ২৯ জুন অর্থবিল এবং ৩০ জুন মূল বাজেট ও নির্দিষ্টকরণ বিল পাস হবে। পরদিন পহেলা জুলাই সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের ভাষণের মধ্য দিয়ে করোনাকালের দ্বিতীয় বাজেট অধিবেশন শেষ হবে।
নতুন বছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের উপর মাত্র ৫দিন আলোচনা হবে। আলোচনায় নির্ধারিত সংখ্যক সরকার ও বিরোধী দলের সদস্য অংশ নিবেন। পুরো বাজেট পাসের প্রক্রিয়া ব্যয় হবে ১০দিন। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা বাজেট আলোচনা হতে পারে। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত এই আলোচনা চলবে। আগামী ২৯ জুন অর্থবিল ও পরদিন ৩০ জুন মূল বাজেট পাস হবে। অধিবেশনে বাজেট ছাড়াও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাসের সম্ভাবনা রয়েছে। মাত্র ১২ কার্যদিবসে আগামী পহেলা জুলাই শেষ হবে সংক্ষিপ্ত বাজেট অধিবেশন। অবশ্য গত বছর মাত্র ৯ কার্যদিবস চলে বাজেট অধিবেশন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সংসদে বাজেট পেশের আগে ওইদিন বেলা ১২টায় সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। মন্ত্রিসভা অনুমোদনের পর অর্থ বিলে স্বাক্ষর করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এ কারণে রাষ্ট্রপতি সেদিন তার সংসদ ভবন কার্যালয়ে অবস্থান করবেন। রাষ্ট্রপতির আগমনসহ অধিবেশনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে সংসদ সচিবালয়। সংসদ ভবন, সদস্য ভবনসমূহ এবং সংসদ এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার, সংসদ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ, পানি সরবরাহ, লিফট, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সচল ও সংসদ এলাকার সৌন্দর্য বাড়ানো হয়েছে।