সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আবাসন সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ জুন ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপে আরো ৫৩ হাজার ৩৪০টি ঘর হস্তান্তর করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ ঘোষণা কেউ আর গৃহহীন থাকবে না। দেশের প্রতিটি অঞ্চলে গৃহহীনদের তালিকা করে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে তাদের মধ্যে ঘর উপহার দেওয়া হচ্ছে।
আজ বুধবার বিকাল ৩টার দিকে প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্বের অধীনে ঘর হস্তান্তর বিষয়ে শিবালয় উপজেলার তেওতা বাজারসংলগ্ন আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শন শেষে প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, মুজিববর্ষের উপহারের অংশ হিসেবে শিবালয়ের তেওতা ইউনিয়নে ২৪টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার এ ঘর পাবে। পুনর্বাসন পাওয়ার পর এসব পরিবারের সদস্যদের আয় বৃদ্ধির কাজে নিয়োজিত রাখতে এবং তাদের জীবনমান উন্নত রাখতে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণের কাজ চলছে। এ ছাড়া এসব ঘরগুলোর ডিজাইন টিনের কালারসহ সার্বিক দিক নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন বলে জানান তিনি। এখানে দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে।
শিবালয় উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউর রহমান খান বলেন, যুগের পর যুগ যে মানুষগুলোর মাথা গোঁজার স্থান ছিল না সে মানুষগুলোকে সরকার যে উপহার দিচ্ছে তাদের কাছে এর চেয়ে বড় উপহার আর কিছু হতে পারে না। আশা করি তারা এখানে থেকে সন্তানাদিদের উচ্চ জীবনমানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
এ সময় মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস, প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার, শিবালয় নির্বাহী অফিসার জেসমিন সুলতানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ভূমিহীন ও গৃহহীন শতাধিক মানুষসহ উৎসুক গ্রামবাসীর ভিড় জমে।
নতুন আশ্রয়ণ প্রকল্পের খাস জমিতে কয়েক যুগ ধরে বংশ পরম্পরা ধরে খুপড়ি ও চালা ঘরের মধ্যে ভূমিহীন ও নদী ভাঙনে নিঃস্ব মানুষগুলোর আশ্রয়স্থল ছিল বলে জানান তেওতা গ্রামবাসীসহ ভুক্তভোগীরা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর পাওয়ার প্রহর গুনছেন এখানকার ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষ জন।
রাবেয়া খাতুন নামের একজন বলেন, কখনো এমন ঘর পামু ভাবি নাই। সরকারের জন্য হাজার কোটিবার দোয়া করি। আমাদের জন্য এমন সুন্দর সুন্দর ঘর করার জন্য।
মন্নাফ (৬০) নামের এক বৃদ্ধা বলেন, জন্মের পর থেইকা এখানেই কোনো রকমে ছিলাম। ঝড়-বৃষ্টি রোদ সবই গেছে আমাদের শইলের উপর দিয়া। এমন ঘর পাইতে যাচ্ছি যা আমাদের জীবনের সেরা পাওয়া। এখন শুধু দিন গুনতাছি কবে পামু।
সুমন নামের এক যুবক জানান, আমাদের অভাবের শেষ নাই। এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাইলে আশা করি জীবনটা বদলাই দিতে পারব। আমাদের বাবা-দাদারা অনেক কষ্টে দিনযাপন করছে। এখানের সকলে দুঃখের অবসানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর জন্য আমাদের দোয়ার কোনো শেষ নেই।
জানা যায়, প্রতিটি বাড়ি দুই লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এসব বাড়ির সমভূমির প্রতিটি গ্রাহক নতুন ঘরে আসবাবপত্র স্থানান্তরের জন্য পাঁচ হাজার টাকা এবং পাহাড় ও হাওর অঞ্চলের গ্রাহকরা সাত হাজার টাকা করে পাবেন।
এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে দেশের ভূমি ও গৃহহীনদের জমি ও ঘর দেওয়ার কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন ৬৬ হাজার ১৮৯টি ঘর দেওয়া হয়। সব পরিবারকে ২ শতাংশ খাসজমির মালিকানা দিয়ে সেখানে আধাপাকা ঘর করে দেওয়া হয়েছে। একই দিনে ২১ জেলার ৩৬টি উপজেলায় ৭৪৩টি ব্যারাকে তিন হাজার ৭১৫টি পরিবারকে পুনর্বাসন করেন।