আগাম সতর্কতা ছাড়া বাঁধ খুলে দিয়ে ভারত অমানবিক আচরণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
নাহিদ বলেন, ‘কোনো ধরনের আগাম সতর্কতা ছাড়া বাঁধ খুলে দিয়ে ভারত অমানবিক আচরণ করেছে। এ বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধান করতে হবে।
ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কে যেন কোনো টানাপড়েন না হয়।’
ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল। ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া বন্যায় এখন পর্যন্ত দুজনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দুজনের মধ্যে একজন ফেনীর ও একজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার।
এখন পর্যন্ত এই ৮ জেলায় ৪ লাখ ৪০ হাজার ৮৪০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতি হয়েছে। তবে ভারত সরকার বলছে, বাংলাদেশের বন্যা গোমতী নদীর ওপর নির্মিত ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে হয়নি।
বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ত্রিপুরার গোমতী নদীর উজানে ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তের জেলাগুলোতে বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশে এমন খবর প্রচারে আমরা উদ্বিগ্ন। এটি সঠিক নয়। আমরা উল্লেখ করতে চাই, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গোমতী নদীর ক্যাচমেন্ট এলাকায় গত কয়েক দিন ধরে এই বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বাংলাদেশে বন্যা মূলত বাঁধের নিচের দিকের এই বৃহৎ ক্যাচমেন্টের পানির কারণে।’
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবারের বর্ষায় বৃষ্টিপাত বেশি হতে পারে বলে আগেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছিলেন।
অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ গণমাধ্যমকে জানান, চলতি বছরের এপ্রিলে ভারতের পুনে শহরে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট আউটলুক ফোরামের ২৮তম অধিবেশনে বলা হয়েছিল, এবারের বর্ষায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হতে পারে। বাংলাদেশের বৃষ্টি যেমন বেশি হবে, তেমনি বাংলাদেশের উজানে ভারতের রাজ্যগুলোতেও বৃষ্টি বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বন্যা মোকাবেলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টামণ্ডলীর বৈঠক শেষে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানে যেভাবে সাড়া দিয়েছেন, সেভাবে দেশের মানুষ এগিয়ে আসবেন আশা করি। ব্যবসায়ীরা যেন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এগিয়ে আসেন।’
পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। কিভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যায় এবং বন্যার কারণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বন্যা মোকাবেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ত্রাণকাজে সমন্বয় করা হবে। উপদেষ্টাদের দপ্তরগুলোও সমন্বয় করবে।’
রিজওয়ানা জানান, বন্যা পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যতে এটা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা নিয়ে ভারতের হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক চলছে।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত তুলে ধরে রিজওয়ানা বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা সহায়তা ফাউন্ডেশন গঠন চূড়ান্ত করা হয়েছে। যারা বিভিন্ন সময় গুম হয়েছেন, তার কারণ এবং কারা দায়ী সেটা তদন্তে কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবাদ করছে। সে প্রতিবাদের কারণে জনগণের যাতে দুর্ভোগ না হয় সেটার একটা উপায় বের করা হবে। এ জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠিত হবে।’
পানিবিষয়ক উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘বিদেশি মাছ ধরার ট্রলার যেন দেশের সমুদ্রসীমায় অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য কোস্ট গার্ডকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘মাত্র ১৫ দিন হলো সরকার দায়িত্ব পালন করছে। যারা বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে, এ দুর্যোগপূর্ণ সংকটের সময়ে ধৈর্য ধরে অপেক্ষার আহ্বান জানাই। এ সময়ে দেশের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’