করোনা মহামারীর সংকট থেকে দ্রুত উত্তরণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে চার দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (এসকাপ) ৭৭তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে তিনি রাষ্ট্রনেতাদের সামনে এসব প্রস্তাব রাখেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে, প্রতিদিন আরও শত শত মানুষের মৃত্যু ঘটাচ্ছে এই ভাইরাসজনিত রোগ। এই মহামারী বহু মানুষকে গরিব থেকে আরও গরিব করেছে। বহু মানুষকে নতুন করে দারিদ্র্যর মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।
এ অবস্থায় এসকাপের সামনে চার দফা প্রস্তাব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, মহামারির সংট থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধারের জন্য উন্নত বিশ্ব, উন্নয়ন অংশীদার এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্যোগী হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
আর যে কোনো সঙ্কট সামলে আরও ভালোভাবে উত্তরণের জন্য উন্নয়নের পদ্ধতি অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব হওয়া উচিত বলে মত দেন তিনি।
অন্য দুই প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি শক্তিশালী এবং সর্বজনীন জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে নীতি ও কৌশল গ্রহণ করা উচিত। সেই সঙ্গে বাণিজ্য, পরিবহন, জ্বালনি ও আইসিটি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগের পথ তৈরির ওপর গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী।
মহামারির ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াতে বাংলাদেশের নেয়া উদ্যোগগুলোর কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সামাজিক সুরক্ষা, কর্মসংস্থান ও অর্থনীতিকে মজবুত করতে সরকার এরইমধ্যে প্রায় ১৪.৬ বিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যা দেশের জিডিপির ৪.৪৪ শতাংশের মত।
বাংলাদেশের সর্বশেষ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কোভিড-১৯ মহামারি থেকে পুনরুদ্ধার এবং দেশকে মসৃণ ও টেকসই এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন অর্জনের জন্য প্রস্তুত করা, এসডিজি অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ দেশ হওয়ার দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ নির্দেশনা রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত যে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে, তাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে একটি কার্যকর সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ আঞ্চলিক সহযোগিতাকে যৌথ সমৃদ্ধি অর্জনের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হিসাবে দেখে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা তার রেকর্ড করা বক্তৃতায় বলেন, আমরা সার্ক, বিমসটেক, বিবিআইএন, বিসিআইএম-ইসি এবং ত্রিপক্ষীয় হাইওয়ের মত উদ্যোগগুলোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। সাউথ-সাউথ নেটওয়ার্ক ফর পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন অন্যান্য দেশের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে।
এসকাপের এশিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলপথের উদ্যোগকে সমর্থনের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এছাড়াও ক্রসবর্ডার পেপারলেস ট্রেড, এশিয়া-প্যাসিফিক বাণিজ্য চুক্তি, পিপিপি নেটওয়ার্কিং, নবায়নযোগ্য শক্তি এবং ইউএন-এসকাপের অন্যান্য উদ্যোগের সঙ্গে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছে।