সারাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। এই ভাইরাস প্রতিরোধে ইতোমধ্যে দেশব্যাপী সরকার ঘোষিত তিনদিনের সীমিত লকডাউন শুরু হয়েছে আজ সোমবার থেকে। এই সময়ে পণ্যবাহী গাড়ি ও রিকশা ছাড়া সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকবে।
এদিকে, আগামী বৃহস্পতিবার থেকে এই লকডাউন আরও কঠোর হবে- এমন ঘোষণা আগেই এসেছে। আর লকডাউন আরও কঠোর হলে সে সময় অর্থাৎ আগামী বৃহস্পতিবার থেকে সাধারণ ছুটির কথা ভাবছে করছে সরকার।
সম্প্রতি করোনাসংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশের আগে থেকেই কঠোর বিধি-নিষেধ বা লকডাউনের বিষয়টি নিয়ে সরকারের নীতি-নির্ধারকদের ভেতরে আলোচনা হচ্ছিল। তবে অর্থবছরের শেষ, জাতীয় সংসদ অধিবেশন চলা, উত্তরবঙ্গের আম মৌসুমসহ সার্বিক অর্থনীতির কথা চিন্তা করে কঠোর সিদ্ধান্তে যেতে দ্বিধান্বিত ছিল সরকার। এরপরও ঘন বসতির ঢাকাকে বাঁচাতে আশপাশের সাতটি জেলায় লকডাউন দিয়ে সরকার পরীক্ষামূলক সতর্ক অবস্থা নিয়েছিল। সাত জেলার লকডাউন কার্যত কোনো ফল দেয়নি। উল্টো সংক্রমণ ও মৃত্যুসংখ্যা বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী শাটডাউনের দিকেই যাচ্ছে সরকার। তবে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে সেটা বাস্তবায়নের পরিকল্পনায় এগোচ্ছেন নীতি-নির্ধারকরা।
সরকারের নীতি-নির্ধারণী মহলের একাধিক উচ্চপর্যায়ের সূত্রের সঙ্গে কথা বলে সাধারণ ছুটির চিন্তার কথা জানা গেছে। তবে সরকারি প্রজ্ঞাপনে ঠিক ‘সাধারণ ছুটি’ ঘোষণা করা হবে কি না তা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও দেশ চালাতে সরকারি অনেক গুরুত্বপূর্ণ দফতর খোলা রাখতে হয়। এসব জায়গায় নিয়োজিত সরকারি কর্মচারীদের সাধারণ ছুটির মধ্যে আলাদা বেতন-ভাতা দিতে হবে। বর্তমানে সরকার কৃচ্ছতা সাধনের নীতিতে থাকায় সরকারি ঘোষণায় ‘সাধারণ ছুটি’ শব্দটি না-ও থাকতে পারে। তবে কার্যত সাধারণ ছুটির মতোই কড়াকড়ি আরোপ হবে। অর্থাৎ জরুরি প্রয়োজনের সরকারি-বেসরকারি অফিস ছাড়া সব ধরনের অফিস-আদালত বন্ধ থাকতে পারে।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের এপ্রিল ও মে মাসে যেমন অবস্থা ছিল, তেমনি অবস্থায় না গেলে করোনাভাইরাসের বর্তমান সংক্রমণের উল্লম্ফন ঠেকানো যাবে না। সংক্রমণের চেইন ভাঙতে সাধারণ ছুটিই একমাত্র ভরসা। তবে গতবারের চেয়ে দু-একটি ক্ষেত্রে ভিন্নতা থাকবে। গতবারের সাধারণ ছুটির মধ্যে জরুরি সেবার সরকারি প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, হিসাব বিভাগ, ওষুধ, গণমাধ্যম, খাদ্যপণ্য, কাঁচাবাজার, পোল্ট্রি, কৃষি, ব্যাংক ইত্যাদি বিষয়গুলো সংক্রান্ত যান ও ব্যক্তিদের চলাচলে বাধা ছিল না। এবার এগুলোর সঙ্গে রফতানিমুখী গার্মেন্টশিল্প, বন্দর, বিমানবন্দর, আন্তর্জাতিক বিমান, প্রবাসীদের দেশের বাইরে যাওয়া-আসার বিষয়গুলোও লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার কথা চিন্তা করা হচ্ছে।
আজ প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠক শেষে বিকালে মন্ত্রিপরিষদসচিব সচিবালয়ে সাংবাদিকদের মন্ত্রিসভা বৈঠকের বিষয়সংক্রান্ত তথ্য জানাবেন। সেই সময় আগামী বৃহস্পতিবারের কঠোর লকডাউনের বিষয়েও কিছু ইঙ্গিত দিতে পারেন বলে জানা গেছে।