প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, একটি বড় দল ভোট বর্জন করে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করায় উপজেলা নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে আসছেন না। এটা রাজনৈতিক সংকট।
মঙ্গলবার (২১ মে) দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি।
সিইসি বলেন, আজকে উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচন হয়েছে। তার মধ্যে ব্যালট পেপারে ১৩২টি আর ইভিএমের মাধ্যমে ২৪টিতে ভোট হয়েছে। নির্বাচনে সহিংসতা ঘটেনি, দু’একটা হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। সেখানে আহত হয়ে এক বা দুইজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু উল্লেখযোগ্য সহিংসতা হয়নি। নির্বাচন ভালোই শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এতে উপস্থিতির হার ৩০ শতাংশের ওপরে হতে পারে। তবে একেবারে নির্ভুল তথ্য বুধবার পাওয়া যাবে।
প্রতিটি কেন্দ্রে বিভিন্ন বাহিনীর অধিক সংখ্যক সদস্য মোতায়েন ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যেটা সব সময় বলি, টিভিতে তাকিয়ে থাকি। কোথাও কোথাও মিডিয়ার কিছু কর্মীও আহত হয়েছেন। সাহস করে যারা ছবি তুলতে গেছেন, তারা হয়তো হেনস্তার শিকার হয়েছেন। আমরা সঠিক তথ্য এখনও পাইনি। হাতাহাতিতে ৩০ জন আহত হয়েছেন, এক বা দুইজন গুরুতর আহত হয়েছেন। গতকাল রাতে একজনের হাত কেটে গেছে।
তিনি আরও বলেন, যেখানেই অন্যায়, অনাচার হয়েছে, ভোট কারচুপির চেষ্টা হয়েছে, সেখানেই হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। মোট ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিছু কারচুপির জন্য ১০ জনকে তাৎক্ষণিক কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দুইজন নিহত হয়েছেন। এটা ভোটকে কেন্দ্র করে নয়। গরম বা অন্য কোনো কারণে। আমরা তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
প্রথম ধাপে বলেছিলেন ধান কাটা ও বৈরি আবহাওয়ার কারণ ভোট ৩৬ শতাংশ পড়েছে। এই ধাপে আরও কম পড়ার কারণ কী- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে ৩০ শতাংশ ভোটকে কখনওই উৎসাহব্যঞ্জক মনে করি না। একটা বড় প্রধানতম কারণ হতে পারে দেশের একটা বড় রাজনৈতিক দল (বিএনপি) তারা প্রকাশ্যে এবং ঘোষণা দিয়ে ভোট বর্জন করেছে। পাশাপাশি জনগণকে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করেছে। যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশে এই ধরনের চেষ্টা হতে পারে। তবে ভোট নিয়ে কোনো সংকট নেই। সংকট হচ্ছে রাজনীতিতে।
সরকারের সাবেক এই সচিব বলেন, আমি মনে করি, রাজনীতি যদি আরও সুস্থ ধারায় প্রবাহিত হয়, আগামীতে ভোটের যে স্বল্পতা, যে সমস্যাটুকু হয়তো কাটিয়ে উঠব। যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশে ভোটারদের স্বশাসনটা বুঝতে হবে। স্বশাসনটা হচ্ছে নিজেই নিজেকে শাসন করবে, নিজেদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। এটা হচ্ছে সচেতনতা, এটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। সে দিক থেকে আমরা আশা করি, রাজনীতিতে যে সংকট রয়েছে সেটা কাটিয়ে উঠব এবং সুস্থ ধারায় রাজনীতি প্রবাহিত হবে। ভোটাররা উৎসাহী হবেন। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসবেন।
সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই তথ্য আমাদের কাছে নেই। বাংলাদেশ বিস্তৃত জমিন। কোথাও কোথাও এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা স্বচ্ছতা ও দৃশ্যমানতায় বিশ্বাস করি। আপনারা যে কোনো তথ্য জনগণের কাছে উপস্থাপনের মতো হলে আপনারা সংগ্রহ করবেন। আপনাদের প্রতি আমাদের সমর্থন থাকবে। তথ্যগুলো যদি সঠিক হয়ে আমরা সেটা দেখব। বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য আমরা দুঃখিত। মিডিয়া যেন স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে, এজন্য আমরা আইনও করেছি।