English

22 C
Dhaka
সোমবার, নভেম্বর ২৫, ২০২৪
- Advertisement -

ন্যায়ের পক্ষে ছাত্রলীগের যারা জীবন বাজি রেখেছে, তারা আমার ভাই: সারজিস

- Advertisements -

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ও হলের পদধারী হলেই গণহারে গ্রেফতার করার পক্ষে আমি নই। অনেককেই বাধ্য হয়ে ছাত্রলীগ করতে হয়েছে। তাদের অনেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছিলেন।

সোমবার রাতে নিজের ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে এ কথা বলেন সারজিস আলম।

সারজিস লেখেন, একটা বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করতে চাই। বিষয়টা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে। ১ জুলাইয়ের আগে এবং তারপর ১ থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে আন্দোলন চলমান ছিল, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। এই আন্দোলনটা প্রধানত ১৫ তারিখ (জুলাই) পর্যন্ত হলের ছেলেমেয়েরাই নিয়ে গিয়েছে। যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সম্পর্কে ধারণা রাখেন, তারা খুব ভালো করে জানেন যে এখানে হলে থাকতে হলে অবশ্যই ছাত্রলীগ করতে হতো। তাদের প্রোগ্রাম (কর্মসূচি), গেস্টরুম (অতিথিকক্ষে ডেকে নেওয়া) করতে হতো, গণরুমে থাকতে হতো। সে জন্য যারা হলে থাকত, তাদের অধিকাংশ একপ্রকার বাধ্য হয়েই এসব করত।

‘হলে ছাত্রলীগের যে কমিটি হতো, এখানে প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী কমিটিতে থাকত কিছু কারণে; যেমন- ভালো একটা কক্ষ বা সিট যেন পাওয়া যায়, যেন চাকরি হওয়া পর্যন্ত হলে থাকা যায় ও অন্যরা যেন তার ওপর অন্যায় না করে বা ট্যাগ না দেয়। বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে অনেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করত, অনেকে ভিন্নমতের লোকদের ওপর অত্যাচার করত, অনেকে ক্যান্ডিডেট (হল শাখার শীর্ষ পদপ্রত্যাশী) হতো, অনেকে একটু ফাঁপর নিয়ে চলত।’

সারজিস আরও লিখেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক প্রথম ধাপের ১৬-১৭ দিনের আন্দোলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ওই ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী। তারা যেমন পোস্টেড (ছাত্রলীগের পদধারী) ছিল, তেমনি হলের তুলনামূলক ক্লিন ইমেজ (স্বচ্ছ ভাবমূর্তির) প্রভাব রাখা ফেস (মুখ) ছিল। তারা হল থেকে ব্যানার নিয়ে আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে নেমেছিল বলেই আদার্স নন-পোস্টেড সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে বের হয়ে আসতে পেরেছিল এবং এ কারণেই ক্যান্ডিডেটরা হল থেকে প্রোগ্রাম নিয়ে আন্দোলনে আসা আটকাতে পারেনি।’

ছাত্রলীগের পদধারী ওই ছেলেরা হল থেকে এক হয়ে বের না হলে নন-পোস্টেডরাও (পদহীন) এক হয়ে বের হওয়ার সাহস করতেন না বলে উল্লেখ করেন সারজিস আলম।

তিনি লেখেন, ‘ওই গাটস আর বোল্ডনেস এই ছেলেগুলোই শো করতে পারে। হলের পার্সপেক্টিভে (পরিপ্রেক্ষিত) সত্য এটাই যে এই পোস্টেড তুলনামূলক ক্লিন ইমেজের হলের ছেলেরা আন্দোলনে এসেছিল বলেই ১ থেকে ১৫ জুলাই সম্ভব হয়েছিল এবং আন্দোলনটাকে অন্য কোনো দলের বা সরকারবিরোধী ট্যাগ দেওয়া যায়নি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, হলের এই পোস্টেড ছেলেগুলোকে আমি ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে নিষিদ্ধের কাতারে ফেলব কি না। উত্তর হচ্ছে, ফেলব না।’

তিনি আরও লেখেন, যারা ১ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে রাজপথে ন্যায়ের পক্ষে নিজের অবস্থান জানান দিয়েছেন, তারা তাদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছেন।

‘সত্য এটাই যে এই আন্দোলন সফল না হলে এই ছেলেগুলোকেই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হতো, বিশ্বাসঘাতক ট্যাগ দেওয়া হতো। যে সিস্টেমের কারণে এদের বাধ্যতামূলকভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে হয়েছে, পোস্ট (পদ) নিতে হয়েছে, সেই সিস্টেমের জন্য দায়ী হলে আপনাদের সবাইকে দায়ী হতে হবে। কারণ, আপনারা চুপ ছিলেন। হলে, ক্যাম্পাসে দিনের পর দিন ওদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ে কেউ বাধা দেননি। ওরা যদি সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটির (নিরাপত্তা) জন্য পোস্ট নেয়, তবে আপনিও নিজের গা বাঁচাতে চুপ ছিলেন। বরং যখনই সুযোগ হয়েছে, ওরা সাহস করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে এসেছে। আর তখনো আপনি নীরব দর্শক হয়ে অনেক কিছু শুধু দেখে গেছেন।’

সারজিস আরও লিখেছেন, এই ৮০ শতাংশ ছেলের কেউ যদি পূর্বে কোনো অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে তদন্ত সাপেক্ষে তার শাস্তি হোক। কেউ যদি পরে কোনো অন্যায়ে জড়িত হয়, তবে তদন্ত সাপেক্ষে তারও শাস্তি হোক। কিন্তু যখন দরকার ছিল, তখন রাজপথে নামালাম আর এখন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পোস্টেড (পদধারী) দেখেই গণহারে গ্রেফতার হবে, এটা কখনোই সমর্থন করি না। এটা হতে পারে না।

‘যারা সময়ের প্রয়োজনে ন্যায়ের পক্ষে ছাত্রলীগের সব বাধা উপেক্ষা করে আমার সঙ্গে জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমেছে, তারা আমার ভাই। আমি তাদের পক্ষে থাকব। সত্য সত্যই। কে কী বলল, তাতে আমার কিছু যায় আসে না।’

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন