বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করা হেফাজতে ইসলামের নেতাদের নাম উল্লেখ না করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, কোনো রকম অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে দেব না। যদি কেউ মনে করেন, তারাই অনেক শক্তিশালী হয়ে গেছেন, এটা তাদের ভুল ধারণা।
রোববার (৬ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘যদি কেউ মনে করেন, তারাই অনেক শক্তিশালী হয়ে গেছেন, এটা তাদের ধারণার ভুল। তারা মিথ্যা ও বিভ্রান্তি করার জন্য…আমি গতকাল ফেসবুকে দেখেছি একটা ছোট ছেলে বলছে যে, মুক্তিযুদ্ধে কত শহীদ হয়েছে, তার চেয়ে বেশি রক্ত হেফাজতের তারা দিয়েছে। এই যে মিথ্যাচার, এই যে বিভ্রান্তি অল্প বয়সের ছেলের মাথার মধ্যে দিচ্ছে এটা তারা জেনেশুনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দিচ্ছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘হেফাজতের ওই ঘটনার (লংমার্চ করে ঢাকা অবরোধ) পর আমরা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিলাম, কয়জন শহীদ হয়েছেন, কোন মাদরাসার, কোন বাড়ির তা যেন আমাদের এসে জানায়, আমরা কিন্তু সেই লিস্ট এখনও পাইনি। এটাই হলো বাস্তবতা।’
হেফাজতের কিছু নেতার উসকানিমূলক বক্তব্য এই প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। হেফাজতের শীর্ষ নেতারা হুকুমের আসামি হবেন কিনা- একজন সাংবাদিক জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘হেফাজতের নেতা হবেন কিনা, কে হবেন সেটা তদন্তের ব্যাপার, তদন্তে যার নাম বেরিয়ে আসবে তার নামেই মামলা হবে, এটা স্পষ্ট।’
সরকার এখন দোলাইরপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিষয়টি রিভিউ করবে কিনা- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার রিভিউ করবে কিনা এটা সরকারের বিষয়। আমাদের বিষয় হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেব।’
‘বঙ্গবন্ধু হলেন জাতির পিতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তার স্মৃতি ধরে রাখা হবে না, এটা তো বাংলাদেশের কোনো মানুষই মেনে নিতে পারবে না। আপনি যদি ফিরে তাকান মুসলিম সভ্যতার যুগে- আলবেরুনি বলেন, ইবনে বতুতা বলেন, তাদের ভাস্কর্য তো বিভিন্ন জায়গায় শোভা পাচ্ছে। সেগুলো তো কেউ ভাঙছে না। আমরা সেখানে কথা বলছি। ভাস্কর্য মানে পূজা নয়। তাকে ধরে রাখা, তার যে অবদান দেশের প্রতি জাতির প্রতি, সেটাকে হৃদয়ে গেঁথে রাখা। আমরা তো অনেক ইসলামিক দেশে ভাস্কর্য দেখেছি। মুদ্রার মধ্যে সৌদির বাদশাহের ছবি রয়েছে, কায়েদে আজমের ছবি রয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের ছবি রয়েছে। ওটা আমরা পকেটে নিয়ে ঘুরছি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে একটা ভাস্কর্য প্রজন্মের পর প্রজন্ম সাক্ষী হয়ে থাকবে, সেখানে আমরা ধ্বংস করতে যাচ্ছি। এটা হলো মনমানসিকতার ব্যাপার। আমরা তো এটার পূজা করছি না। স্মৃতিটাকে ধরে রাখতে চাচ্ছি।’
দেশে আরও বিভিন্ন স্থানে ভাস্কর্য রয়েছে, সেগুলোর নিরাপত্তায় কী ব্যবস্থা নেয়া হবে- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো যারা ভাঙবে তারা তো নিশ্চয়ই না জেনে মুর্খতার পরিচয় দেবে। নিরাপত্তা আমরা অবশ্যই দেখব।’
সরকার কি হেফাজতের বিষয়ে নমনীয়- এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারও প্রতি নমনীয় নই। যেটাই আমাদের সামনে আসছে সেটাই আমরা দেখছি। আমরা জনগণকে নিয়েই চলি, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই কাজ করি। কাজেই জনগণ যেটা চায় সেটাই প্রতিফলিত হবে, সরকার সেটাই করবে।’