English

25 C
Dhaka
মঙ্গলবার, নভেম্বর ৫, ২০২৪
- Advertisement -

কৃষক বাবাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে পুলিশের এএসপি হন হারুন

- Advertisements -
Advertisements
Advertisements

মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের জন্ম। ২০তম বিসিএসের মাধ্যমে ২০০০ সালে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় পুলিশে চাকরি পান তিনি। অথচ তার শ্রমজীবী বাবা মো. হাসিদ ভূঁইয়া মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।

২০১১ সালের ৬ জুলাই সংসদ ভবনের সামনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বিএনপি নেতা জয়নুল আবদীন ফারুককে মারধর করে আলোচনায় আসেন তৎকালীন ডিএমপির তেজগাঁও জোনের ডিসি হারুন। এ ঘটনার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থা কুড়ান তিনি। এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। একের পর এক পদোন্নতি পেয়ে পুলিশের প্রবল প্রতাপশালী কর্মকর্তা বনে যান।

আর তখন থেকেই যেন টাকার মেশিন হয়ে ওঠেন হারুন। সরকারের প্রতিপক্ষ দমনের মূর্তিমান আতঙ্ক ডিবি হারুন বিভিন্ন কৌশলে নিপীড়ন-নির্যাতনকে হাতিয়ার করে রাতারাতি অঢেল সম্পদ ও বিত্তবৈভবের মালিক হয়ে ওঠেন। পরিস্থিতি এমন হয়ে ওঠে যে, হেলিকপ্টার ছাড়া তিনি বাড়িতেও আসতেন না। দেশে-বিদেশে শতকোটি টাকা পাচারের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তার গ্রামের বাড়ি মিঠামইনে শতকোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছেন ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’। এই রিসোর্টে রয়েছে হেলিপ্যাড ও অত্যাধুনিক সুইমিংপুল। রোববার দুপুরে মিঠামইন পরিদর্শনকালে লোকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা ওই রিসোর্ট সম্পর্কে নেতিবাচক বর্ণনা দেন।

সাবেক ডিবিপ্রধান হারুনের কিশোরগঞ্জের হাওড় উপজেলা মিঠামইনে শতকোটি টাকার প্রাসাদোপম প্রমোদশালা ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’-এ এখন ঘুঘু চরার অবস্থা। অথচ কয়েক মাস আগেও ওই রিসোর্টের কক্ষ বুকিং করতে কয়েক সপ্তাহ আগে যোগাযোগ করেও পাওয়া কঠিন ছিল। বলতে গেলে ‘অদৃশ্য আকর্ষণে’ আগাম বুকিং হয়ে থাকত ওই রিসোর্টের অধিকাংশ ডিলাক্স ও সুপার ডিলাক্স কক্ষ।

কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার বিপ্লবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের জৌলুসেরও পতন ঘটে। বন্ধ হয়ে যায় এর সব কপাট। নিভে যায় চোখ ধাঁধানো ও মনমাতানো লাল-নীল বাতির আলো-আঁধারির খেলা। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। এদিকে রিসোর্টের জন্য ভয় দেখিয়ে, জোরপূর্বক নেওয়া জমির দাম এখনো পাননি সংখ্যালঘুসহ অনেকে।

মন্ত্রী-এমপি, প্রশাসন এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও নায়ক-নায়িকাসহ সমাজের বিত্তবৈভবের মালিক ধনাঢ্য নারী-পুরুষের এক ‘নিরাপদ আশ্রয়’ হয়ে উঠেছিল এই রিসোর্ট। সারা দিন-রাত বিলাসবহুল গাড়ির বহর আর হেলিকপ্টারের লাইন ছিল ওই নিরাপদ আনন্দ ধাম প্রেসিডেন্ট রিসোর্টে। হাওড়ের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে অবস্থিত প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট সময়ের পরিক্রমায় এখন ভূতুড়ে পল্লিতে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন হাওড়ে ডিবি হারুনের হেলিপ্যাড সুবিধাসংবলিত শতকোটি টাকার প্রাসাদোপম প্রেসিডেন্ট রিসোর্টে এখন ঘুঘু চরার অবস্থা দেখা যায়। ৫ আগস্টের পর বন্ধ হয়ে যায় এটি। আত্মগোপনে চলে যান সাবেক ডিবিপ্রধান হারুনও। এরপর থেকেই একে একে বেরিয়ে আসছে ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক রিসোর্টের জন্য জমি নিয়ে দাম পরিশোধ না করার কাহিনি।

মিঠামইনের ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে ৪০ একরেরও বেশি জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয় ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’। এর প্রিমিয়াম স্যুটের প্রতিদিনের ভাড়া ২০ হাজার টাকা। সর্বনিম্ন ডিলাক্স রুমের ভাড়া প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা। ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রিসোর্টটি উদ্বোধন করা হয়। প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন হারুনের ছোট ভাই ডা. শাহরিয়ার। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব দীলিপ চৌধুরীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, তার কোটি টাকা মূল্যের ১ একর ১০ শতাংশ পৈতৃক সম্পত্তি হারুন প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের জন্য ভয় দেখিয়ে নিয়ে আর টাকা দেননি। এখনো তিনি টাকা পাওয়ার আশায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

একই কথা জানালেন মানিক মিয়া নামের আরেক ভুক্তভোগী। তার অন্তত ৫ কোটি টাকা মূল্যের ৫ একর জমি একই কায়দায় রিসোর্টের দখলে নিয়ে একটি টাকাও দেননি হারুন অর রশিদ।

মিঠামইন উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমসহ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করা হারুন পুলিশি ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাতারাতি অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক বনে যান। তিনি হেলিকপ্টার ছাড়া বাড়িতেও আসতেন না।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন