২০১৩-২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত-নিহতদের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশবাসীকে এটুকুই বলবো, ওই দুঃসময়ের কথা যেন কেউ ভুলে না যায়!’
রোববার (৬ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘অগ্নি সন্ত্রাসের আর্তনাদ: বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের খণ্ডচিত্র’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ২০১৩-২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময় অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহতদের স্বজন এবং আহতদের অনেকে উপস্থিত ছিলেন।এছাড়া আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকরাও ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা আগুনে পুড়েছে, কী অবস্থা তাদের? এক একজনের জীবনে কত স্বপ্ন ছিল, কত আকাঙ্ক্ষা ছিল, সেই আকাঙ্ক্ষাগুলো একে একে পুড়ে শেষ হয়ে গেছে, একে একে পুড়ে সব ধ্বংস। আমি শুধু দেশবাসীকে এটুকুই বলবো, ওই দুঃসময়ের কথা যেন কেউ ভুলে না যায়!’
ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটালে সহ্য করা হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার খালি একটাই আহ্বান থাকবে দেশবাসীর কাছে—কেউ রাজনীতি করতে চায়, সুষ্ঠ রাজনীতি করুক আমাদের আপত্তি নাই। কিন্তু আমার এই সাধারণ মানুষের গায়ে কেউ হাত দিলে তাদের রক্ষা নাই, তাদের রক্ষা নাই; এটা সহ্য করা যায় না, কোনো মানুষ সহ্য করতে পারে না। ’
এ ধরনের ঘটনা যাতে কেউ ঘটাতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি দেশবাসীকে বলবো, এ ব্যাপারে সকলকে সজাগ থাকতে, এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আর কেউ যেন ঘটাতে না পারে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দল-মত নির্বিশেষে যেই হোক এদেশের প্রতিটি মানুষের স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার আছে। প্রতিটি মানুষের স্বাধীনভাবে নিজের জীবন জীবিকা করার অধিকার আছে। প্রতিটি মানুষের সুন্দরভাবে বাঁচার অধিকার আছে। সেই অধিকার সংরক্ষণ করাই আমাদের দায়িত্ব, আমরা সেটাই চেষ্টা করে যাচ্ছি। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। আজকে এদের বিচার হচ্ছে। বিচার হবেই, বিচার এটা বোধহয় আল্লাহর তরফ থেকেই হবে। যারা এ ধরনের অগ্নি-সন্ত্রাসের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, বিচার হচ্ছে, অনেকে শাস্তি পাচ্ছে, ভবিষ্যতেও পাবে। ’
‘কিন্তু যারা হুকুম দাতা তাদের কথা আপনারা ভেবে দেখেন আর এরাই আবার জানি না মানুষ কীভাবে এদের পাশে দাঁড়ায়, কীভাবে সমর্থন করে যারা এই ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারে, মানুষকে কষ্ট দিতে পারে। ’
বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক সংগ্রামের পর যখন আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হলাম, রাষ্ট্র পরিচালনা শুরু করেছিলাম, মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতির কাজ করে যাচ্ছিলাম তখনই সরকার উৎখাতের নামে যে অগ্নিসন্ত্রাস, খুন ২০০১ সালে শুরু, আবার ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সালে বারবার। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কীভাবে মানুষ মারে, একটা গাড়িতে যাচ্ছে জীবন্ত মানুষগুলো সেখানে আগুন ধরিয়ে মানুষকে হত্যা করা। কীভাবে মানুষ এভাবে মানুষের ক্ষতি করতে পারে? এটাই নাকি আন্দোলন। এই আন্দোলন তো আমরা কখনো দেখিনি…. আমরা তো কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি পেট্রোল বোমা দিয়ে অথবা অগ্নিসংযোগ করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করে আন্দোলন করা হবে। বিএনপি ঘোষণা দিল অবরোধ হরতাল কিন্তু কাজ হলো মানুষ হত্যা করা। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৩ সালেই তো প্রায় তিন হাজার ৬০০ জনকে পেট্রোল বোমা মেরে তারা আহত করেছে, ১৪-১৫ তে করেছে। ’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এই আন্দোলন কীরকম আন্দোলন সেটা আমি জানি না। মানুষের জন্য আন্দোলন করতে হলে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে মানুষকে নিয়েই তো আন্দোলন করবে। আর তারা আক্রমণ চালিয়েছে হত্যা, পাশবিক অত্যাচার, বাড়ি দখল… পিটিয়ে পিটিয়ে হাড় গুঁড়ো করে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার, আবার তাদের গ্রেফতার করে নিয়ে দিনের পর দিন অত্যাচার, এরকম অত্যাচারের শিকার আমরা হয়েছি। ’
অনুষ্ঠানে বিগত সময়ে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময়কার অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত-নিহত এবং আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত যানবাহনসহ বিভিন্ন ঘটনার ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী নিহতদের স্বজন এবং আহতদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তাদের খোঁজখবর নেন।
বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময় নিহতদের স্বজন এবং অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহতদের বেশ কয়েকজন সেই কষ্টের স্মৃতিচারণা করেন। সেই সব হামলার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে তারা বিচার দাবি করেন।