আরব সাগরে ২৩ বাংলাদেশি নাবিকসহ ‘এমভি আব্দুল্লাহ’ জাহাজ জিম্মিকারী সোমালিয়ার জলদস্যুরা মুক্তিপণ চায়নি বলে জানালেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামুদ্রিকবিষয়ক ইউনিট সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম। আজ বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
সামুদ্রিকবিষয়ক ইউনিট সচিব বলেন, ‘গণমাধ্যমে মুক্তিপণের কথা প্রকাশিত হয়ে থাকলে তা কল্পিত। আমাদের কাছে এখনো কোনো মুক্তিপণ তারা চায়নি, মুক্তিপণের ব্যাপারে কোনো যোগাযোগও করেনি। জলদস্যুরা আমাদের সঙ্গে এখনও কোনো যোগাযোগ করেনি। আমরা এখনো জানি না জলদস্যুদের কি দাবি-দাওয়া। আমরা যদি জানতে পারি, তখন হয়তো কৌশলগতভাবেই গণমাধ্যমকে পুরোপুরি জানাতে পারব না।’
খুরশেদ আলম বলেন, ‘এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ বাংলাদেশি নাবিক সুস্থ আছেন। তাদেরসহ জাহাজ ফেরত আনাই আমাদের প্রথম লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্য থেকে আমরা বিচ্যুত হব না।’
তিনি বলেন, ‘জাহাজ চলাচলের নানা ঝুঁকির রুট থাকে। আমাদের এই জাহাজটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ রুট দিয়ে যায়নি। তারপরও জলদস্যুরা অপেক্ষায়ই ছিল বা এ নিয়ে ভিন্নমত আছে।’
‘এমভি আব্দুল্লাহর’ বর্তমান অবস্থানের বিষয়ে খুরশেদ আলম বলেন, ‘জলদস্যুরা জাহাজটির দখল নিয়ে সোমালিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়ে আজ ভোর নাগাদ সোমালিয়ার কাছাকাছি তারা নোঙর করেছে। বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা খবর রাখছি, জলদস্যুদের প্রায় ৬০ জন জাহাজে অবস্থান নিয়েছে এবং বাংলাদেশি ২৩ নাবিক সুস্থ আছেন।’
পূর্ব অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে সামুদ্রিকবিষয়ক সচিব বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের আগের অভিজ্ঞতা আছে। জাহান মনি নামের একটি জাহাজ ২০১০ সালে এমন ঘটনার মুখে পড়েছিল। ১০০ দিনের মাথায় সব নবিকসহ জাহাজটি আমরা ফেরত আনতে পেরেছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া মালয়েশিয়ান জাহাজ ‘‘আল-বেদো’’ যখন জলদস্যুদের কবলে পড়ে তখন সাতজন বাংলাদেশি, দুইজন ইরানি,তিনজন ভারতীয়, দুইজন পাকিস্তানি ও পাঁচজন শ্রীলঙ্কান নাবিক ছিলেন তাতে। কিন্তু মালয়েশিয়ার মালিকপক্ষ কোনো দায়িত্ব না নেওয়ায় জাহাজটি আটকে থাকে, আড়াই বছর পর ডুবে যায়। কিছু প্রাণহানিও ঘটে।’
খুরশেদ আলম বলেন, ‘আমরা পুরো সময়জুড়েই কাজ করেছি এবং প্রায় তিন বছর চার মাস পরে আমরা নেগোসিয়েশন করে কেনিয়ার সেনাবাহিনী দিয়ে বাংলাদেশি নাবিকদের অক্ষত উদ্ধার করে এনেছি।’
‘এমভি আব্দুল্লাহ’ থেকে সরকারের তৎপরতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টায় আছি। নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী, নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাহাজের মালিকসহ সব পক্ষের সঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ ইউনিট সচিব বলেন, ‘যেভাবে জাহান মনিকে আনা হয়েছে, যেভাবে ‘‘আল-বেদো’’ থেকে নাবিকদের অক্ষত আনা হয়েছে সেই অভিজ্ঞতার আলোকে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। জাহান মনি আনতে ১০০ দিন লেগেছে, আর মালয়েশিয়ান জাহাজ থেকে সাতজন ক্রু ফেরত আনতে লেগেছে তিন বছর চারমাস। কাজেই সময় একটা ব্যাপার।’