কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে হামলায় জড়িতদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেছেন, সারাদেশে যারা হামলা চালিয়েছে, ভাংচুর করেছে, তাদেরকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। তাদের পিছনে যারা আছে, তারাও চিহ্নিত হবে। কোন উদ্দেশ্যে করা হয়েছে, সেট্ওা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। অপরাধীরা কোনোভাবেই ছাড় পাবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রবিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘শিশুদের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল-এর ৫৮তম জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম আয়োজিত সোমিনারে সভাপতিত্ব করেন ফোরামের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, সাবেক আইজিপি ও কলামিস্ট এ কে এম শহীদুল হক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান এবং জাগো নিউজের সহকারী সম্পাদক ড. হারুন রশীদ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কলামিস্ট মিথুশিলাক মুরমু। বক্তৃতা করেন ফোরামের সদস্য-সচিব অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস, অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন, অধ্যক্ষ রেজাউল হাসান, অধ্যক্ষ মো. জালাল উদ্দিন মিয়া, সহযোগী অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম প্রমূখ।
সেমিনারে বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান বলেন, বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। কিন্তু এটা বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। সকলকে নিয়েই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার কাজ করছেন। এখানে সাম্প্রদায়িকতার কোন স্থান নেই। তিনি আরো বলেন, কোন ধর্মপ্রাণ মানুষ অন্যের ধর্মগ্রন্থ নিজের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে রাখবে না। ফলে কুমিল্লায় যেটা ঘটেছে, সেটা বিশেষ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। সেই অশুভ উদ্দেশ্য সফল হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে ড. মীজানুর রহমান বলেন, এতিম হলেই সেই শিশুরা কেন হুজুরদের দখলে চলে যাবে? তাদেরকে এতিমখানায় থাকতে হবে? এতিম শিশুকে জঙ্গি করে গড়ে তোলা সহজ। সারাদেশে সেটাই করা হচ্ছে। এতিম শিশুদের জন্য প্রত্যেকটি উপজেলায় শিশু নিকেতন করা হোক। জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সাংস্কৃতিক আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, যারা শিশু রাসেল হত্যাসহ ১৫ আগষ্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলো, তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিলো। তারাই আজ মন্দিরে হামলা চালাচ্ছে। তারা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিকে ধ্বংসের চক্রান্তে লিপ্ত। চলমান মন্দিরে হামলা, কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সেই ষড়যন্ত্রের অংশ। তাই ষড়যন্ত্রকারীদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রতিহত করতে হবে।
সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু নিজের সন্তানদেরও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। সামরিক শাসকরা সেই হত্যাকারীদের পৃষ্টপোষকতা দিয়েছে। দু’টি সামরিক শাসক দেশে সুবিধাবাদি শ্রেনী সৃষ্টি করেছে। সেই সুবিধাবাদিরা সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। গুজব ছড়িয়ে রামু, নাসিরনগর, কুমিল্লার মতো বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। যে কারণে এখনো দেশ নিরাপদ নয়। শিশুদের নিরাপত্তার জন্য আগে দেশকে নিরাপদ করতে হবে।
অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, যিনি বাংলাদেশ সৃষ্টি করলেন, সেই দেশে তার সন্তান বেঁচে থাকার অধিকার হারিয়েছে। নিরাপদ বাংলাদেশের প্রধান স্তম্ভ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ধ্বংস করা হয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ঘুরে দাড়িয়েছে। বঙ্গবন্ধু শোষিতের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা গেলে শিশুদের জন্য নিরাপদ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, শিশু শেখ রাসেল শিশু অধিকার আদায়ের মূর্ত প্রতীক। শেখ রাসেলকে হত্যার মাধ্যমে ঘাতকেরা মানব সভ্যতার জঘন্যতম অপরাধ সংঘটিত করেছে। এই হত্যাকাণ্ড অমিত সম্ভাবনাকে ধ্বংস করেছে। তবে, দেশবাসী আশা করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে শিশু অধিকার নিশ্চিত হবে।
মূল প্রবন্ধে সরকার সকল শিশুর বিনামূল্যে জন্মনিবন্ধন নিশ্চিত করাসহ ৭দফা সুপারিশ করা হয়। উত্থাপিত সুপারিশে শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের সব মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি এবং শিশু নির্যাতন বন্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া একটি সমন্বিত শিক্ষা আইন ও পাঠ্যপুস্তক থেকে উগ্রবাদী ধর্মীয় উপাদান সরিয়ে ফেলার সুপারিশ করা হয়।