জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রায় দেড়’শ কোটি মানুষ জরুরি অবস্থার মুখে পড়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত দেশগুলোকে এ সংকট মোকাবেলায় অর্থায়ন ও প্রযুক্তি বিনিময়ের প্রতিশ্রুতি পূরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার (২৫ মে) সন্ধ্যায় গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি ক্লাইমেট ভালনেরবল ফোরামের (সিভিএফ) সভাপতির দায়িত্বভার হস্তান্তর অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতাদের এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সিভিএফ-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর দেড়শ কোটি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের জরুরি অবস্থার মুখে পড়েছে। চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা সত্ত্বেও, আমরা বিশ্বকে জলবায়ু সংকট থেকে মনোযোগ সরিয়ে দিতে পারি না।
তিনি বলেন, প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী উন্নত দেশগুলোকে এ খাতে অর্থায়ন ও প্রযুক্তি বিনিময়ে তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে। ঘানার নেতৃত্বে, আমরা সিভিএফ-এর ট্রেডমার্ক নৈতিক শক্তি এবং যৌক্তিক দাবি উপস্থাপন করে অপূরণীয় দাবিগুলির জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকব।
২০২০ সালে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সভাপতিত্ব গ্রহণ করে। করোনা মহামারির মধ্যে সভাপতির দায়িত্বপালনকালে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্থদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিভিএফ-এর নতুন দায়িত্ব পেয়েছে ঘানা।
সিভিএফ-এর পরবর্তী সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ায় ঘানার প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আডোকে অভিনন্দন জানান বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা।
সিভিএফ সদস্য দেশগুলোর অধিকার আদায়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সোচ্চার কণ্ঠস্বর শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে এই ফোরামের হাল ধরেছি। তবে স্বস্তির কথা হলো, আমাদের বেশিরভাগ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে আমরা সফল হয়েছি।
তিনি বলেন, জলবায়ুসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আলোচনায় সিভিএফ এখন গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির জন্য সম্মিলিত কণ্ঠস্বর হিসেবে গড়ে ওঠেছে প্রতিষ্ঠানটি। সিভিএফ সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি তার প্রমাণ।
শেখ হাসিনা বলেন, শুরু থেকে কপ২৬-এর সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের মনোযোগ ছিল। মহামারির মধ্যেও আমরা জলবায়ু সংকটের দিকে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। জলবায়ু প্রসঙ্গে উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়াতে দেশগুলোর জন্য ‘মিডনাইট সারভাইভাল ডেডলাইন’ শুরু করেছি। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা তাদের এনডিসি জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। প্রায় ৭০টি দেশ আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে।
সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপে সহায়তা দিতে সিভিএফ-ভি২০ জয়েন্ট মাল্টি-ডোনার তহবিল তৈরি করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এবং মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ এতে প্রাথমিক বরাদ্দ দিয়েছে। ২০২১ সালে আমরা ক্লাইমেট ভালনারেবলস ফাইন্যান্স সামিট করেছি। এটি পরবর্তী পাঁচ বছরে শত বিলিয়ন ডলার জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণ পেতে সহায়তা করবে। গ্লাসগোতে তা আমরা উপলব্ধি করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা-গ্লাসগো ঘোষণা সিভিএফ-এর মূল দাবি এবং প্রতিশ্রুতির সারসংক্ষেপ। আমরা উচ্চ-নিঃসরণকারী দেশগুলোকে তাপমাত্রাকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি বজায় রাখা এবং প্রতিবছর জলবায়ু খাতে উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়াতে আমাদের দাবির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছি। আমরা জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে অভিযোজন খাতে অর্থায়ন বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক সংলাপের জন্য প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মেয়াদে নিযুক্ত পাঁচ থিম্যাটিক অ্যাম্বাসেডরের কাজের প্রশংসা করে বলেন, তাদের কাজে আমরা গর্বিত।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানবাধিকার ইস্যুতে যারা উচ্চকিত, তাদের কাছে আমাদের উচ্চ আশা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুতি এবং অভিবাসন ইস্যুতে আমাদের পারস্পরিক সমর্থন অক্ষুণ্ণ থাকবে। জলবায়ু ইস্যুতে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সিভিএফ-ভি২০ সংসদীয় গ্রুপ।
জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের নিজস্ব উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আমরা ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ তৈরি করছি। আমরা বিশ্বাস করি, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা অন্য দেশগুলোও এটি থেকে তাদের নিজস্ব প্রেক্ষাপটে পরিকল্পনা গ্রহণের একটা ভিত্তি পাবে।
নতুন সভাপতি ঘানাকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি আত্মবিশ্বাসী যে সিভিএফ-এর নেতৃত্ব প্রেসিডেন্ট ঘড়ির নিচে থাকা আকুফো-আডোর স্থির হাতে থাকবে। ট্রোইকার সদস্য হিসেবে ঘানাকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের সাবেক ও প্রয়াত মহাসচিব কফি আনানের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগের কথা আমি স্মরণ করছি। আমি নিশ্চিত যে, সিভিএফ-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ঘানার এই সম্পর্ক দেখে তিনি খুশি হতেন।