ক্ষণে ক্ষণে উলুধ্বনি, শঙ্খ, কাঁসর আর ঢাকের বাদ্যি জানান দিচ্ছে ঠাকুরঘরে উদ্ভাসিত মৃন্ময়ী রূপ প্রতিমাবরণ চলছে। শুরু হয়ে গেছে বাঙালি সনাতন সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় শারদীয় দুর্গোৎসবের।
সোমবার (১১ অক্টোবর) মহাষষ্ঠী। এদিন রাত ৯টা ৫৭ মিনিট অবধি তিথি থাকবে। মঙ্গলবার মহাসপ্তমী।
বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে এই পূজা ঐতিহ্যবাহী বারোয়ারি বা কমিউনিটি পূজা হিসেবে হিন্দুদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করে। হিন্দু বিশ্বাসে ধূপের ধোঁয়ায় রোববার (১০ অক্টোবর) সায়ংকালে ঢাক-ঢোলক-কাঁসর-মন্দিরার চারদিক কাঁপানো নিনাদ আর পুরোহিতদের জলদকণ্ঠে: ‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা, নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ’ মন্ত্রোচ্চারণের ভেতর দূর কৈলাস ছেড়ে দেবী পিতৃগৃহে এসেছেন ঘোটক অর্থাৎ ঘোড়ায়।
‘সুদর্শন’ পঞ্জিকামতে, ঘোড়ায় আগমন বা গমনের ফল- ছত্রভংস্তুরঙ্গমে অর্থাৎ ছত্রভঙ্গ, ধ্বংস বা ছন্নছাড়া বা ধ্বংসাত্মক লীলার আশঙ্কা। অর্থাৎ ঘোটকে আগমনে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা প্রকাশ পাবে।
দুর্গোৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দলবেঁধে পূজা দেখতে আসছেন। বিকেল থেকেই পূজামণ্ডপগুলোতে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকবে। বাহারি পোশাকে নিজেদের সাজিয়ে রাঙিয়ে উৎসব-আনন্দে মেতে উঠেছে শিশু-কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণী। এবার সারা দেশে ৩২ হাজার ১১৮টি পূজামণ্ডপে দুর্গোত্সব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ঢাকা মহানগরে পূজা হবে ২৩৮টি। এ বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৩ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন।
এদিকে করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে উৎসব-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখতে ভক্তদের প্রতি অনুরোধ করেছে পূজা উদ্যাপন পরিষদ। এছাড়া মেলা, আলোকসজ্জা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আরতি প্রতিযোগিতা বন্ধ এবং বিজয়া দশমীর দিন শোভাযাত্রা পরিহার করে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে বলে জানানো হয়। সারা দেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।
এই উৎসব উপলক্ষে সারাদেশের পূজামণ্ডপগুলোর পুরোহিত বা ঠাকুর এবং আগত পূজারীদের জন্য মাস্ক পরিধান অপরিহার্য করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা উদযাপনের জন্য সনাতন সম্প্রদায়ের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিবের (সমন্বয় ও সংস্কার) স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ অনুরোধ জানানো হয়।