প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। সোমবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরের পর থেকে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়।
বেলা দেড়টার দিকে বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাটের বীণাস্মৃতি স্নানঘাটে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে রাজধানীতে দেবীকে বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর একের পর এক বিভিন্ন মণ্ডপ থেকে ঘাটে প্রতিমা আসতে থাকে বিসর্জনের জন্য।
শঙ্খ আর উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাকঢোলের সনাতনী বাজনার সঙ্গে দেবী-বন্দনার গানের মধ্য দিয়ে বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রায় অংশ নেন ভক্তরা। বিধি-নিষেধের কারণে শোভাযাত্রায় ভক্তদের সংখ্যা ছিল অন্য বছরের তুলনায় কম।
ঢাকায় ওয়াইজঘাট ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। বিসর্জনের জন্য একটি ট্রাকে একসঙ্গে অনেক মানুষ গেলেও এবার একটি ট্রাকে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য ১০ জন যেতে পারবেন। এর বাইরে অতিরিক্ত যাওয়া যাবে না বলে নির্দেশনা দেয়া হয়।
প্রতিমা ঘাটে নেয়ার পর ভক্তরা শেষবারের মতো ধূপধুনো নিয়ে আরতি করেন। শেষে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে নৌকায় তুলে বিসর্জন দেয়া হয়।
চণ্ডীপাঠ, বোধন এবং দেবীর অধিবাসের মধ্য দিয়ে গত বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হয় দুর্গাপূজা। এবার দেবী এসেছেন দোলায়, যাবেন গজে (হাতি) চড়ে।
করোনা মহামারির কারণে সংক্রমণ এড়াতে এ বছর ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়। উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে বিধায় এবারের দুর্গোৎসবকে শুধু ‘দুর্গাপূজা’ হিসেবে অভিহিত করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। করোনার কারণে এবার হয়নি বিসর্জনের শোভাযাত্রা। হয়নি সিঁদুর খেলা।
পূজা উপলক্ষে এবার বেশকিছু বিধিনিষেধও জারি করা হয়। মণ্ডপে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি সীমিত করা ও সন্ধ্যায় আরতির পরই বন্ধ করে দেয়া হয় পূজামণ্ডপ। ছিল না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ধুনুচি নাচের প্রতিযোগিতা। জনসমাগমের কারণে স্বাস্থ্যবিধি যাতে ভঙ্গ না হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই প্রসাদ বিতরণ ও বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়। পূজার সময় বেশিরভাগ ভক্ত এবার অঞ্জলি নিয়েছেন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে।
দশমীর দিন সকাল ৬টা ৪৫ মিনিট পর শ্রী শ্রী দেবীর দশমীবিহিত পূজারম্ভ প্রতিমা-নিরঞ্জন ও শান্তির জল প্রদান করা হয়। দর্পণ বিসর্জনের পর দেবী দুর্গা ও অন্যান্য দেবদেবীর বিসর্জন দেয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে দেবী মর্ত্য ছেড়ে স্বর্গে ফিরবেন।
পুরাণ মতে, মহিষাসুরের সঙ্গে ৯ দিন ৯ রাত যুদ্ধের পর দশম দিনে জয়ী হন দেবী দুর্গা। এ জন্যই বিজয়া। সেই লোকাচার বাংলার ঘরে ঘরে সিঁদুর খেলা হিসেবে পরিণত হয়েছে। সিঁদুর খেলার পাশাপাশি চলে কোলাকুলিও। তবে করোনা মহামারির কারণে এবার এসব হয়নি।
বিজয়া দশমী উপলক্ষে সোমবার সরকারি ছুটির দিন।
করোনা মহামারির কারণে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে এবার সরাসরি টেলিভিশনে এবং ফেসবুকে অঞ্জলি দেয়ার ব্যবস্থার কথা আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। ভক্তদের বাসায় বসেও অঞ্জলি নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে এবার অনেক ভক্তই বাসায় বসে প্রতিদিন পূজার অঞ্জলি গ্রহণ করেন।
দূর্গাপূজায় মহাঅষ্টমীর মূল আকর্ষণ হচ্ছে কুমারী পূজা। সব নারীর মধ্যে মাতৃরূপ এই উপলব্ধি সবার মধ্যে জাগ্রত করার লক্ষ্যে ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে প্রতিবছর এই কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হলেও এবার নির্দেশনার কারণে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়নি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সর্বশেষ দেয়া তথ্য অনুসারে, এ বছর সারাদেশে ৩০ হাজার ২২৩টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। গত বছর সারাদেশে দুর্গাপূজার মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৩৯৮টি। গত বছরের তুলনায় এবার এক হাজার ১৭৫টি মণ্ডপে পূজা কম হচ্ছে। অন্যদিকে ঢাকা মহানগরে এ বছর পূজামণ্ডপের সংখ্যা ২৩৩টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২৩৭টি। আর ঢাকা জেলায় পূজা হচ্ছে ৭৪০টি।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন