আজ শনিবার ফজরের নামাজ আদায় শেষে মিনা থেকে হাজিরা সমবেত হবেন এ আরাফাতের ময়দানে। হাজিদের (পুরুষ) পরনে শুধু সেলাইবিহীন সাদা দুই খণ্ড বস্ত্র (ইহরাম)। এখানে তারা সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত অবস্থান করবেন। এ সেই ময়দান যেখানে চৌদ্দ শ বছর আগে দাঁড়িয়ে মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশে খুতবা দিয়েছিলেন আল্লাহর প্রিয় হাবিব, নবী ও রসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)। বিদায় হজের খুতবায় নবীজি ঘোষণা করেছিলেন, আজ থেকে ইসলামকে পরিপূর্ণ ধর্ম ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালার কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম। আজ হাজিদের মননে যেন বিদায় হজের সেই ভাষণের অনুরণন। আজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা দেবেন মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ ড. মাহের বিন হামাদ বিন মুয়াক্বল আল মুয়াইকিলি। সমবেত হাজিরা এখানে হজের খুতবা শুনবেন। আরবি ভাষায় দেওয়া তাঁর এ ভাষণ বাংলাসহ বিশ্বের ২০টি ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শোনানোর ব্যবস্থা করেছে সৌদি হজ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। আজ মসজিদে নামিরায় নামাজও পড়াবেন তিনি। তাঁর ইমামতিতে হাজিরা একসঙ্গে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন। এরপর মুজদালিফার উদ্দেশে আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করবেন হাজিরা। মুজদালিফায় পৌঁছে একসঙ্গে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন হাজিরা। সেখানে মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন এবং সেখান থেকে শয়তানকে নিক্ষেপের জন্য ছোট ছোট পাথর সংগ্রহ করবেন।
আগামীকাল রবিবার ১০ জিলহজ সৌদি আরবে পালিত হবে ঈদুল আজহা। স্থানীয় যারা পবিত্র হজ পালন করেননি তারা ঈদের নামাজ পড়বেন ও কোরবানি করবেন। হাজি সাহেবানরা ফজরের নামাজ শেষে মুজদালিফা থেকে আবার মিনায় ফিরে আসবেন। এরপর রামি আল জামারাহ আল আকাবাহ বা বড় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করবেন। তারপর পশু কোরবানি হয়ে গেলে পুরুষরা মাথা মুণ্ডন করে মক্কা নগরীতে ফিরে পবিত্র কাবা তাওয়াফ করবেন। এটি তাওয়াফ আল ইফাদা বা হজের প্রধান তাওয়াফ হিসেবে গণ্য করা হয়। এরপর আবার মিনায় ফিরে ১২ জিলহজ পর্যন্ত রামি আল জামারাহ ছোট শয়তানদের পাথর মেরে হজের মূল কার্যক্রম শেষ করবেন। পরে পবিত্র কাবায় বিদায়ি তাওয়াফ করে হজের পূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবেন। সৌদি মুয়াল্লিমরা ১০, ১১ ও ১২ জিলহজের তিন দিনের মধ্যে যে-কোনো দিন তাওয়াফ আল ইফাদা সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করে থাকেন। গতকাল শুক্রবার শুরু হয়েছে পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। ৮ জিলহজ জোহর থেকে ৯ জিলহজ ফজর পর্যন্ত মিনায় অবস্থান ও কসরের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নত। তবে লাখ লাখ হাজির সুষ্ঠুভাবে হজ সম্পাদনের সুবিধার্থে সৌদি হজ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার রাতেই হাজিদের মিনায় নিয়ে আসে। শুক্রবার সারা দিন ও রাত মিনায় হাজিরা নিজ নিজ তাঁবুতে অবস্থান করে ইবাদত-বন্দেগি ও নারীপুরুষনির্বিশেষে গুনাহ মাফ ও পাপমুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করেন। এরপর আজ শনিবার ফজরের নামাজ পড়ে হাজিরা আরাফাতের ময়দানে উদ্দেশে রওনা হন। ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের অন্যতম প্রধান হজ। তীব্র গরম উপেক্ষা করে বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা প্রান্তের প্রায় ১৮ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ করতে পবিত্র মক্কা নগরীতে সমবেত হয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে এবার পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরব পৌঁছেছেন ৮৫ হাজার ১২৯ জন।