মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, ঐতিহাসিক ও শোকাবহ আশুরা আজ। সৃষ্টির শুরু থেকেই আল্লাহতায়ালা এ দিনকে বিশেষ মর্যাদাময় করেছেন। এ জন্য আশুরার দিনে এমনসব ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যা অন্য কোনো দিনে একীভূত হয়নি। ইসলামপূর্ব যুগে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের পাশাপাশি মক্কার মুশরিকরাও আশুরার দিনকে বিশেষভাবে সম্মান করত। আশুরার মূল চেতনা সত্য-মিথ্যার লড়াইয়ের, যাবতীয় জুলুমের বিরুদ্ধে জাগরণের।
আশুরা উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার ধর্মপ্রাণ মানুষ নফল রোজা পালন করবেন। অনেকে গতকাল রোজা রেখেছেন, যারা সোমবার রোজা রাখতে পারেননি, তারা আজকের রোজার সঙ্গে মিলিয়ে আগামীকালও রোজা পালন করবেন। আজ সরকারি ছুটিও। আরবি ‘আশারা’ শব্দের অর্থ দশ। আর আশুরা মানে দশম। ইসলামি পরিভাষায়, মহররমের ১০ তারিখকে ‘আশুরা’ বলে।
সৃষ্টির শুরু থেকে মহররমের ১০ তারিখে তথা আশুরার দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এ কারণে আশুরার মর্যাদা ও মাহাত্ম্য উত্তরোত্তর বেড়েছে। হজরত মুসা (আ.) ফেরাউনের অত্যাচার থেকে এই দিনে পরিত্রাণ লাভ করেছিলেন তার অনুসারীদের নিয়ে নীল নদ পার হয়ে। তাদের পেছনে থাকা ফেরাউন সদলবলে নীল নদে ডুবে যায়।
রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। আশুরার দিন অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে রোজা পালন করেছেন নবী কারিম (সা.)।
হিজরি ৬১ সালের এই দিনে ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার পরিবারের সদস্যরা ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে শহীদ হয়েছিলেন। ইসলামের মহান আদর্শ সমুন্নত রাখতে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের এই আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। এ ঘটনা মানবতার ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে শত শত বছর ধরে ন্যায় ও কল্যাণের প্রতিষ্ঠায় মানুষকে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে আসছে। বিশ্বের মুসলমানদের কাছে দিনটি একদিকে যেমন শোকের, তেমনি হত্যা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার চেতনায় উজ্জ্বল। আশুরা যুগ যুগ ধরে মুসলমানদের নীতি ও আদর্শের ওপর অটল থাকার শিক্ষা দেয়। সর্বদা সত্য ও ন্যায়ের পথে চলা, অসত্যের কাছে মাথানত না করা, আত্মত্যাগের মাধ্যমে ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজেকে উজ্জীবিত করার শিক্ষাও দেয় আশুরা।
কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসাইন (রা.) সপরিবারে আত্মত্যাগের মাধ্যমে এ শিক্ষা দিয়েছেন, আল্লাহর পথে অটল থাকতে মুমিনরা কখনো তাদের জীবন উৎসর্গ করতে দ্বিধা করে না। বর্তমানের মুসলমানরা যাবতীয় অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারলেই ইমাম হোসাইন (রা.)-এর ত্যাগ সার্থক হবে; এটাই কারবালার শিক্ষা।
আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, কারবালার শোকাবহ ঘটনা অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে উদ্বুদ্ধ করে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলার প্রেরণা জোগায়।
পবিত্র আশুরার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে জাতীয় জীবনে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ দেশ গড়ে তুলতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
আশুরা উপলক্ষে শিয়া ধর্মাবলম্বীরা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাজিয়া মিছিল বের করবেন। মিছিলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি ইত্যাদি নিয়ে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করেছে। আশুরা উপলক্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো হয়, যা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়Ñ এসবও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
আশুরা উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গতকাল বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ‘পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা নেয়ামত উল্লাহ আল ফরিদী। এ সময় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মো. মুশফিকুর রহমানসহ সংস্থাটির পরিচালক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাধারণ মুসল্লিরা উপস্থিত ছিলেন।