বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইউজে’র মুখপত্র ‘বিএফইউজে জার্নাল’-এর মোড়ক উম্মোচন অনুষ্ঠানে সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, দেশে এখন সূর্যমুখী সাংবাদিকতা চলছে। সূর্যমুখী ফুল যেমন সবসময় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে, তেমনি সরকার যেভাবে চায় মিডিয়া সেভাবেই সাংবাদিকতা চর্চা করছে। তাঁরা বলেন, দেশে বর্তমানে একমুখী সাংবাদিকতা চলছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই। ভোটের মাধ্যমেও মত প্রকাশের যে অধিকার তাও নেই। সরকার বিভিন্ন কালাকানুন তৈরি করে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে হরণ করছে। ২৩ সালের নির্বাচনের আগে সরকার আরো কঠোর আইনের চিন্তাভাবনা করছে বলে শোনা যাচ্ছে।
আজ শনিবার (১৮ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থিত বিএফইউজে কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মোড়ক উম্মোচন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএফইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দৈনিক নয়াদিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন। বক্তব্য রাখেন বিএফইউজে ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বিএফইউজে মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শহিদুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বাকের হোসাইন, বিএফইউজের সহ-সভাপতি মোদাব্বের হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক খুরশীদ আলম, কোষাধ্যক্ষ খায়রুল বাশার, নির্বাহী সদস্য একেএম মহসীন, আবদুস সেলিম, জাকির হোসেন প্রমুখ।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য কাজী রওনাক হোসেন, সিনিয়র সাংবাদিক কাজীম রেজা, আসাদুজ্জামান আসাদ, আবু ইউসুফ, শাখাওয়াত হোসেন চৌধুরী, মোহাম্মদ মাসুদ, জেসমিন জুঁই, রফিক লিটন প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নয়াদিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন বিএফইউজের জার্নাল প্রকাশের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, মানুষের মেমোরির চাইতেও প্রিন্ট ডকুমেন্ট অনেক চিরস্থায়ী ও কার্যকর। তাই মূদ্রিত তথ্যভান্ডার যুগ যুগ ধরে কাজে লাগে। তিনি বলেন, একসময় সাংবাদিক এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতি মানুষের যে শ্রদ্ধা ছিল তা কমে আসছে। এর কারণ সাংবাদিকতায় নীতি-নৈতিকতার সংকট।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শওকত মাহমুদ বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা আল্লাহ প্রদত্ত, কিন্তু বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার মত প্রকাশ ও ভোটের অধিকার হরণ করেছে। সরকার আগামীতে আরো কঠোর আইনের চিন্তা-ভাবনা করছে। তিনি বিএফইউজে’র জার্নাল প্রকাশের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এখন দেশে আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামী পন্থী সাংবাদিক হিসেবে বিভাজন নেই। আছে ফ্যাসিবাদের পক্ষের শক্তি ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তি।
সভাপতির বক্তব্যে বিএফইউজে সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেন, সাংবাদিক নির্যাতন-নিপীড়ন ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে। প্রতি মাসে ৬ জন করে সাংবাদিক নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। ক্ষমতাধররা এ নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত। সাংবাদিক নিপীড়নের তথ্য পরিসংখ্যানও সঠিকভাবে পাওয়া যায় না। আর সে কারণেই বিএফইউজে গণমাধ্যম বিষয়ক সকল তথ্য এবং সাংবাদিক নির্যাতনের চিত্র মলাটব্দী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।ংযবফ
তিনি বলেন, বিএফইউজে জার্নাল প্রকাশে যে সব পরামর্শ এসেছে ইনশাল্লাহ আগামীতে সেগুলো সমন্বয় করা হবে। বিএফইউজে’র একটি মাসিক ভার্চুয়াল সংখ্যা ও ত্রৈমাকি মূদ্রিত জার্নাল নিয়মিত প্রকাশিত হবে বলে উপস্থিত সকলকে আশ্বস্ত করেন।
বিএফইউজের মহাসচিব নূরুল আমিন রোকন ঈদের পূর্বে সকল মিডিয়ায় বকেয়া বেতন বোনাস প্রদানের দাবি জানিয়ে বলেন ভুল-ক্রুটি শুধরে আগামীতে ‘বিএফইউজে জার্নাল’ আরো সুন্দরভাবে যেন প্রকাশ করতে পারি সে জন্য সকলের সহযোগিতা চাই। তিনি সকল বন্ধ মিডিয়া খুলে দেয়া, রুহুল আমিন গাজীসহ কারাবন্দী সাংবাদিকদের মুক্তি ও সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধের দাবি জানান।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বিএফইউজে জার্নাল প্রকাশকে স্বাগত জানিয়ে বলেন অসময়ে এই প্রকাশনা আমাদের আশাবাদী করছে। তিনি প্রকাশনা অব্যাহত রাখার প্রতি বিএফইউজে নেতৃবৃন্দকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং বিএফইউজে-ডিইউজে’র সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে জার্নাল প্রকাশে সহযোগিতা করার আহবান জানান।
বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ বলেন প্রিন্ট ও ইলেট্রনিক মিডিয়া হুমকির সম্মুখীন কিন্তু সে সময়ে বিএফইউজের জার্নাল প্রকাশ একটি সাহসী উদ্যোগ।
ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শহীদুল ইসলাম বিএফইউজে জার্নাল প্রকাশের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমাদের চ্যালেঞ্জ অনেক। মিডিয়া বন্ধ, চাকরি আছে বেতন নাই তার মধ্যেও বিএফইউজের জার্নাল প্রকাশ ইতিবাচক বলে মনে করি।
বিএফইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন বলেন, অনেক হতাশার সময়ে আলোর প্রত্যাশা এই জার্নাল। বিএফইউজে তথা সাংবাদিকদের ধারাবাহিক ইতিহাস ও ঐতিহ্য সাধারণকে জানানোর মাধ্যম হতে পারে এই জার্নাল।