তারেক মাহমুদ: শহীদুল্লাহ ফরায়জী। এই নামটির সাথে যে ছবিটি ভেসে ওঠে সে ছবিটি সৌম্যদর্শন স্মীতহাস্য সাধুসম এক সাধকের। গান লেখেন বলে তাকে গীতিকবি বলা হয়। কিন্তু এই উপাধিটি তার কর্মের আংশিক প্রকাশ।
তিনি প্রধানত: কবি। শুধু কবি নয় একজন সত্যিকার অর্থেই মানবিক মানুষ। মানুষের মূল চরিত্রের প্রকাশ পায় তার মানবিকতায়।
কিন্তু মানুষ ক্রমশ: যখন তার মানবিকতা হারিয়ে ফেলছে তখন একজন শহীদুল্লাহ ফরায়জী সেই মানবিক হওয়ার ডাক দিয়ে চলেছেন নিজের সাধনার মধ্য দিয়ে। সাধনা এবং চর্চা দুই জিনিস। সাধনা হলো থিওরিটিকেল আর চর্চা তার প্রয়োগ মানে প্রাকটিকেল। দুটো ধারার মধ্যে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন শহীদুল্লাহ ফরায়জী।
তিনি শিল্পী, তিনি মানবিক। এই দুটোর সন্নিবেশন করা খুব মুশকিল। তিনি পেরেছেন। ভীষণ সাধারন এবং একটা ত্যাগী জীবনের মধ্য দিয়ে তিনি সিদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছেন এই জীবনাচরনে। শহীদুল্লাহ ফরায়জীকে বলা হয় জনপ্রিয় গীতিকবি। এর কারন তার লেখা গান সুর হয়ে শিল্পীর কণ্ঠের মধ্য দিয়ে খুব দ্রুত শ্রোতার কাছে পৌঁছে যায়।
কিন্তু আমি তাকে ‘জনপ্রিয়’ বলে কেবলই সমসাময়িক ফেনাটিজমের ফ্রেমে আটকাতে চাই না। নদীকে যেমন পুকুরের পাড় দিয়ে আটকানো যায় না, শহীদুল্লাহ ফরায়জীর লেখা গান তেমনই কেবলই গান নয়। তার গানে মরমীবাদ রয়েছে,সূফীবাদ রয়েছে। মরমী শিল্পী বারী সিদ্দিকীর কণ্ঠে গাওয়া তার লেখা গান অমরত্বের স্বাক্ষর বহন করে বলে মনে করি।
তার গানে ‘তুমি’ শব্দটি বহুবার এসেছে। সাধারনভাবে তার কোন কোন গান কেবলই নারী পুরুষের সস্তা প্রেম বলে দর্শক-শ্রোতা মনে করতে পারেন। আমার কাছে সে প্রেমের ক্যানভাস আরো অনেক বড়। দেশপ্রেম, ইশ্বরপ্রেম, মানবপ্রেম রয়েছে সেসব লেখাতে। ‘তুমি’ শব্দটির মধ্য দিয়ে দেশ, মাটি, সৃষ্টিকর্তা, আধ্যাত্ববাদ বর্ণীত হয়েছে।
তার মানবিকতা এবং দায়বদ্ধতা আমাকে অনুপ্রাণীত করে। তিনি শুধু গান রচনা করেন না। তিনি একজন চিন্তাশীল কবি, কলাম লেখক এবং সুবক্তা। তার কাজের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে তিনি মানুষের কথা বলেন, মাটির কথা বলেন, বলেন দেশপ্রেমের কথা।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেয়া তার বক্তব্যগুলো লিখিত হয়ে যদি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হতো তাহলে একটি অসাধারন কাজ হতো।
শহীদুল্লাহ ফরায়জীর কর্মের নানা আঙ্গিক নিয়ে দীর্ঘ রচনার দাবী রাখে। তাকে পাঠ করার মধ্য দিয়ে আমরা একটা মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন প্রজন্ম তৈরীতে এগিয়ে আসতে পারি। শহীদুল্লাহ ফরায়জীর মানবিক শিল্পের জীবন আরো প্রাণময় হোক।