নীরব ভাষার অনুভূতিসমগ্র
কোথাও তুমি নেই— আমি নেই…
হৃদপিণ্ডবিহীন উঠে আসছি কখনও-বা…
অথচ, স্পন্দিত দিনে
আমি তোমার চোখে চোখ রাখতেই
তুমি কেঁপে কেঁপে উঠতে দারুণ…!
এখন তোমার পলল হৃদয়ে শুধুই আড়ষ্টতা!
আর শত কোলাহল পণ্ড করে যায়
আমাদের নীরব ভাষার অনুভূতিসমগ্র!
তোমার অভাবে আমি ব্যথায় ব্যথায়
কালশিটে ঠোঁট— উস্কো-খুস্কো কেশ—
শুষ্ক কণ্ঠনালি— অনিয়মক্লান্ত শরীরখণ্ড…!
ঠিক রক্তেভেজা মাংসপিণ্ডের মতো…;
অথচ, তুমি যেন কিছুই বোঝো না!
কিছুই বোঝো না! কিছুই বুঝতে চাও না!
প্রিয় বিদূষী, আমি তো জানি, তুমি সব বোঝো—
সব কিছুই বোঝো তুমি— তবে প্রকাশ করো না।
……………………
আমার এ ডানার ক্ষত
আহা, আমার এ ডানার ক্ষত আমি দুচোখ ভরে দেখি…!
ডানার ক্ষতচিহ্নের নীল ব্যথায় সুনীল হ’য়ে উঠি…!
তুমি তো জানো না, এবার সবচেয়ে বড় রাতটি
আমি তোমাকে ছাড়াই উদযাপন ক’রে নিয়েছি…
বহুরাত যেভাবে কণা কণা নাছোড় পরমাণুর মতো
ক্রমাগত চিবিয়ে খেয়েছে আমায়…!
নগর প্রান্তর শত উল্লাসে ওড়া ডানার ওমে
রঙিন চঞ্চু ঘষে ঘষে কী বুনোঘ্রাণপুলকিত!
তুমি বহু বহু দিন নিশব্দ হাসি হাসতে শুধু!
…………………………….
পুলক প্রকাশে বিকশিত হও
মাটি ছুঁয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে নরম সবুজ আলোর ধারায় জেগে ওঠে প্রাণ;
জেগে ওঠো— চাঁদ শারদীয় মেঘের নিঘুম বিরহে;
চোখ খুলে— জ্যোৎস্নার হাত ছুঁয়ে যাও;
লতাগুল্মবৃক্ষের হাতে হাত রাখো— চোখ দুটি বন্ধ ক’রে;
যে তোমার সংবেদী বহুরঙ— গ্রহণ করো;
সৌরালোকে, জলে অনুভব করো সবুজের শিহরণ;
প্রশ্বাসে পুলক প্রকাশে বিকশিত হও।
……………….
কিছু রেখার মুখ
সূর্যের বুক ছেনে কোনও হাহাকার পাবে না তুমি;
চাঁদের জমিনজুড়ে নেই কোনও শোকের চাদর;
ফেনিল জোছনায় ধু-ধু প্রান্তর শান্ত শিশিরক্লান্ত;
জল গড়িয়ে যায় বিষাদী হাতের আদরে—;
সময় অভিনীত চোখের সান্ধ্য ধুসর ছবিগুচ্ছ—
কে কবে প্রদর্শনে উঠায় ছাপচিত্রের দলে!
থেমে যাবার চারুপাঠ— হয়তো তাদের
ভবিতব্যে রেখায়িত কোনও সৌজন্য ছায়ায়!
সমান্তরালে নিঃশেষ শ্বাসের ঠুনকো শরীর;
বাগানের চিলতে প্রাঙ্গণে রোদচিত্রে
একাকী কিছুক্ষণ স্থির হতে পারো, গভীরতর;
কিছু রেখার মুখ মানচিত্রের দেহ অঙ্কনে দাগে দাগে
ব্যস্ত করে তুলবে তোমায় বার বার…;
সময় অবিন্যস্ত কিংবা আপাত সাজানো যা-ই হোক
তোমার চলাচল দেখছি না আমি—
তোমার বুকের সচল শব্দমালায় কান পেতেছি শুধু।
……………………………
কেউ একজন প্রতীক্ষায় ছিলো
একটি সবুজ ভুবনের উৎসব সাজিয়ে কেউ একজন প্রতীক্ষায় ছিলো—
আমার জানা ছিলো না;
অসম জোছনার তাপে পুড়ে পুড়ে কালশিটে ঠোঁট ছাই হয়ে উড়ে যায়…
পলকা বাতাসে কাঁপে সময় আমার…
আমি হৃদয় ক্ষরণকারী চোখে তার রেখেছিলাম শত চোখ…।
…………………………..
কবি-পরিচিতি
কামাল বারি; জন্ম : ১৮ জানুয়ারি, ১৯৬৫ খ্রি.; প্যারিদাশ রোড, ঢাকা।
পৈতৃক নিবাস : ডাঙ্গারপাড়, ভাঙ্গা, ফরিদপুর।
বাবা : বারি।
মা : জহুরা।
নব্বইয়ের দশকে কবিতা লেখা শুরু।
কবিতা ছাড়াও লিখছেন— গল্প, গান, প্রবন্ধ, নাটক, উপন্যাস ইত্যাদি।
বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ক্রিয়েটিভ ফিচার ও রিপোর্ট লিখে থাকেন মাঝে মাঝে।
সময় সময় সাহিত্যপত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশে ব্যস্ত থাকেন।
পেশা : সাংবাদিকতা।
নেশা : কবিতা।
শখ : ভ্রমণ
*********************************************