তাপমাত্রা যত নামতে থাকে ততই হাত-পা অসাড় হয়ে যায়, চলাফেরা করতে ইচ্ছে করে না। অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় কাজ করাও সমস্যা হয়। বেশি ঠাণ্ডায় আবার দেখা দিতে পারে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা। তাই শীতে উষ্ণতা পেতে এবং চনমনে থাকতে গরম পোশাক ব্যবহারের পাশাপাশি খেতে হবে এমন কিছু খাবার, যেগুলো শরীর গরম রাখতে সাহায্য করবে।
আদা চা
গরম আদা চা আপনাকে ঠাণ্ডার দিনে গরম অনুভব করাতে সাহায্য করে। আদা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলে পরিচিত এবং তা থার্মোজেনেসিসকে (এটি একটি ডায়াফোরটিক, যার মানে এটি আপনার শরীরকে ভেতর থেকে গরম করতে সাহায্য করবে) উদ্দীপিত করতে পারে। শীতে আপনাকে উষ্ণ রাখা আদা চা পান করার অনেকগুলো স্বাস্থ্য উপকারের মধ্যে একটি মাত্র।
মধু
অল্প গরম পানিতে প্রতিদিন এক চা চামচ মধু আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে। মধু আপনাকে সর্দি-কাশি থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। মধু প্রকৃতিগতভাবে উষ্ণ খাবার। নিয়মিত মধু পান করা এই শীতে আপনার শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করবে।
বিভিন্ন তরল খাবার
শরীরকে উষ্ণ রাখতে এই শীতে ধোঁয়া ওঠা মসলা চা কিংবা কফির জুড়ি মেলা ভার। পাশাপাশি রাখতে পারেন বিভিন্ন সবজি ও চিকেন দিয়ে তৈরি স্যুপ। দিনের সব ক্লান্তি মুছে ফেলতে দিনের শেষ ভাগে রাখতে পারেন এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ।
জলপান করা : এই শীতে আপনার শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করার একটি সহজ উপায় হলো পানি পান করা। পানি আপনার শরীরকে সর্বোত্তমভাবে কাজ করতে সাহায্য করে এবং আপনার অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ডিহাইড্রেশনের কারণে আপনার শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়, যা হাইপোথার্মিয়া হতে পারে। সাত সকালে সাধারণত পিপাসা লাগে না। এ সময় মন না চাইলেও নিয়ম করে পানি পান করতে হবে।
বিভিন্ন মসলা
শরীরের উষ্ণতা বজায় রাখতে মসলা একটি কার্যকর উপাদান। যেহেতু আমাদের রন্ধনপ্রণালীতে প্রায়ই মসলা ব্যবহার করি, তাই এটি সহজেই আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যের অংশ হয়ে ওঠে। তেমন কিছু মসলা হলো আদা, জিরা, গোলমরিচ এবং দারচিনি ইত্যাদি। আদা আমাদের চা, স্যুপ বা যেকোনো তরকারিতেও ব্যবহার করা যেতে পারে। জিরা দীর্ঘ সময়ের জন্য আপনার শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে। তাই আপনার খাবার প্রস্তুতের সময় জিরা যোগ করতে পারেন। সালাদ এবং নানা রেসিপিতে দারচিনির গুঁড়া যোগ করা যেতে পারে। কারণ এটি স্বাদ বাড়ায় এবং বিপাক হার বাড়ায়।
গুড় : এটি হজমশক্তির উন্নতিতে সাহায্য করে এবং আপনাকে উষ্ণ রাখে। এ ছাড়া এটির অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। যেমন—এটি কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করে, বিপাককে বাড়িয়ে তোলে। খাবারের পর অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে।
ঘি : আয়ুর্বেদ অনুসারে, দেশি ঘি হলো সবচেয়ে সহজে হজমযোগ্য চর্বিগুলোর মধ্যে একটি, যা রান্নার পাশাপাশি তরকারিতে স্বাদ বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। ঘি আপনার শরীরের পিত্ত (তাপ উপাদান) নিরাময়ের একটি প্রাকৃতিক উপায়।
ঘির অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে। যেমন—এটি হজমে সহায়তা করে, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং টক্সিন নির্গমনে সহায়তা করে। এটি আপনাকে উষ্ণ রাখে এবং আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। দেশি ঘিতে ভাজা পেঁয়াজ খেলে গলা ব্যথার উপশম হয়।
লেখক : পুষ্টিবিদ, গুলশান ডায়াবেটিক কেয়ার