ছোটবেলায় স্কিপিং বা দড়ি লাফ খেলেনি এমন কেউ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। একটা সময় ছিলো যখন সবাই না বুঝেই খেলার ছলে দড়ি লাফাতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে সচেতনতা ও ফিট থাকার জন্য অনেকেই জিমে না গিয়ে ঘরে বসেই দড়ি লাফান।
প্রতিদিন অল্প কিছু সময় বের করে ব্যায়াম করলেই শরীর ফিট রাখা সম্ভব। আর এটি করার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো দড়ি লাফানো। এর মাধ্যমে অনেক ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যাকে দূরে রাখা যায়।
১. হার্ট ভালো রাখে
দড়ি লাফানোর মাধ্যমে হার্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায় । রোপ জাম্পিং বা দড়ি লাফ, কার্ডিও সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, যা সারা শরীরে রক্ত প্রবাহিত করার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় । হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট-সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরণের ঝুঁকি কমিয়ে এটি হার্টকে সুস্থ্য রাখতে সহায়তা করে
২. ক্যালোরি ও মেদ কমায়
দেহের অতিরিক্ত চর্বি ঝরাতে দড়ি লাফের জুড়ি নেই। এটি দৌড়ানোর চেয়ে বেশি ক্যালোরি পোড়াতে সক্ষম। তাই নিয়মিত দড়ি লাফের মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত ওজন, মেদ কমানো সম্ভব। গবেষণায় জানা গেছে, এক ঘণ্টা দড়ি লাফে ১৩০০ ক্যালোরি খরচ হয়।
৩. মাংসপেশি শক্তিশালী হয়
নিয়মিত দড়ি লাফ মাধ্যমে কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত মাংসপেশির গঠন সুন্দর ও মজবুত হয়। তাছাড়া এতে শরীরের উপরের অংশ যেমন হাত ও কাঁধ বলিষ্ঠ হয়।
৪. হাড় মজবুত করে
যখন একজন ব্যক্তি লাফ দেয়, তখন শরীর স্থল প্রতিক্রিয়া শক্তি দ্বারা সৃষ্ট হাড়ের উপর অস্থায়ী চাপে সাড়া দেয় এবং তাদের আরও শক্তিশালী এবং ঘন করে পুনর্নির্মাণ করে। সুতরাং নিয়মিত দড়ি লাফানো হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে, ফলে এটি অস্টিওপোরোসিস-এর ঝুঁকি কমায়।
৫. রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
নিয়মিত দড়ি লাফের কারণে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এছাড়া এই ব্যায়ামের কারণে মনও থাকে স্বতঃস্ফূর্ত, চাঙ্গা, প্রাণবন্ত ও ফুরফুরে। মানসিকতা নেতিবাচক থাকলে, তা হয়ে উঠে ইতিবাচক। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ২০ মিনিট করে দড়ি লাফের ফলে মস্তিষ্কের ভেতরে বেশ কিছু হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায় যা কগনিটিভ ফাংশনের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে। এতে করে স্মৃতিশক্তি এবং বুদ্ধির বিকাশেও সহায়তা হয়।
৬. ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ায়
দড়ি লাফানোর ফলে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে ।
দড়ি লাফের সাবধানতা
১. দড়ি লাফের সময় যে প্রথমেই যে বিষয় লক্ষ্য রাখা উচিত তা হল একটি ভালোমানের দড়ি ব্যবহার করা।
২. অনেক বলে থাকেন, খালি পায়ে স্কিপিং ভালো। এতে পায়ের অনেক সমস্যাও ভালো হয়। কিন্তু হঠাৎ করে খালি পায়ে স্কিপিং করলে পায়ে ব্যথা হতে পারে। তাই স্পোর্টস শু পরে স্কিপিং করাই শ্রেয়। অথবা কার্পেট বা ফোমের ওপরে স্কিপিং করা যেতে পারে।
৩. শুরুতেই দ্রুত লাফানো উচিত নয়। এতে শরীরে উপর চাপ পরে। তাই প্রথমে ধীরে ধীরে স্কিপিং করবেন এবং আস্তে আস্তে গতি বাড়াবেন।
৪. যাদের হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে বা সম্প্রতি অস্ত্রোপচার হয়েছে, তাদের দড়িতে লাফ দেওয়া উচিত নয়। দড়ি লাফ দেওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৫. হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দড়িতে লাফ দেওয়া উচিত নয়, কারণ এর ফলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে ।
দড়ি লাফানোর সঠিক সময়
ব্যায়াম করার যেমন একটা নির্দিষ্ট সময় রয়েছে, ঠিক তেমনি দড়ি লাফানোর সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হল সকাল। এটি সারা শরীরে ব্লাড সারকুলেশন উন্নত করতে সহায়তা করে । এ ছাড়াও অনেকে সন্ধ্যার সময় দড়ি লাফ দিতে পারেন । এই দুই সময়ই দড়ি লাফানোর জন্য সমচেয়ে ভালো এবং উপযুক্ত সময় বলে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।