ডা. জাহিদ পারভেজ: হাত-পায়ের তালুসহ শরীর থেকে অল্প পরিমাণ ঘাম হওয়া একটি স্বাভাবিক দৈহিক ক্রিয়া। এ ভ্যাপসা গরমে তো কথাই নেই। এসি বা ফ্যান না থাকলে সবাইকে ঘেমে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে। কিন্তু স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও এই ঘাম যদি অধিক পরিমাণে দেখা দেয় বা তা থেকে যদি দুর্গন্ধ নির্গত হয়, তখন সেই অবস্থাকে বলা হয় হাইপারহাইড্রোসিস।
শরীরের কোনো নির্দিষ্ট স্থান বা গোটা শরীর এ রকম হঠাৎ ঘেমে উঠতে পারে। একটি ব্যাপার লক্ষণীয়, অনেকেরই শুধু হাত কিংবা হাত-পা একত্রে অধিক পরিমাণে ঘামে এবং কখনও কখনও দুর্গন্ধও হয়। এ সমস্যা রোগ-শোকে আক্রান্ত, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও আবেগতাড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি দেখা দেয়। এ ছাড়া টমেটো, সস, চকলেট, চা-কফি এবং গরম স্যুপ খেলে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
এ ক্ষেত্রে কপালে, ওপরের ঠোঁটে, ঠোঁটের আশপাশে এমনকি বুকের মধ্যখানে অধিক পরিমাণে ঘাম হতে দেখা যায়। খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই এ ধরনের অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়াকে বলা হয় গাস্টেটরি হাইপারহাইড্রোসিস।
ঘাম হওয়া যদিও শরীরের জন্য উপকারী। কিন্তু এটি কখনও কখনও অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে।
চিকিৎসা
২০ শতাংশ অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড টিংচার সপ্তাহে তিনবার প্লাস্টিক গ্লাভসের মাধ্যমে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া ঘুম ও দুশ্চিন্তানাশক ওষুধের সঙ্গে প্রবানথিন ব্যবহারেও ভালো ফল পাওয়া যায়। অনেক সময় আয়ানটোফোরোসিস বা ইনজেকশন বোটক্স দেওয়া হয়। তবে এ প্রক্রিয়া ব্যয়বহুল। এ রোগের আজ পর্যন্ত কোনো স্থায়ী চিকিৎসা বের হয়নি।
ঘর্মরোধ
ঘাম না হওয়াকেই ঘর্মরোধ বলা হয়। বিভিন্ন কারণে এ রোগ হতে পারে। যেমন– জন্মগতভাবে যদি ঘর্মগ্রন্থি অনুপস্থিত থাকে কিংবা স্নায়ুতন্ত্র আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অনুভূতির ক্ষমতা কমে গেলে অথবা কোনো বিষাক্ত ওষুধ ব্যবহারে ঘর্মগ্রন্থি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে, লোমকূপের মধ্যে অধিক পরিমাণে ময়লা জমলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। এমন হলে বগলে পচা মাছের দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম হয়।
বগল ছাড়া পায়েও এ রকম হতে পারে। ঘামের সঙ্গে ব্যাকটেরিয়া মিশে ঘাম হয়। সাবান ও অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড আক্রান্ত জায়গায় লাগানো যায়। এ ছাড়া পটাশ বালতির পানিতে দুই-তিন ফোঁটা মিশিয়ে ১০-১৫ মিনিট পা চুবিয়ে রাখা যায়। এতে পায়ের দুর্গন্ধ কমে।
লেখক : চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।