প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের আয়ুর্বেদে জোয়ানের গুণাগুণ নিয়ে অনেক বর্ণনা রয়েছে। আধুনিক গবেষণাও জোয়ানের ভেষজগুণকে সমর্থন করে। গবেষণায় জোয়ানের মূল সাতটি উপকারিতাকে তুলে ধরা হয়েছে।
তালিকায় রয়েছে হজমশক্তি বাড়ানো, রক্তচাপ কমানো, কোলেস্টেরলের মাত্রা উন্নত করা, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা থেকে মুক্তি, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য, দাঁত ব্যথা উপশম করা ও আর্থরাইটিসের ব্যথা হ্রাস করা।
হজমে সহায়তা
জোয়ানে উপস্থিত থাইমল গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসরণ বাড়ায়। এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াটির সাহায্যে পেট ব্যথা, খিঁচুনি, পেট ফাঁপা ও বদহজমের মতো সাধারণ হজম সমস্যাগুলো সেরে যায়। জোয়ান পাচনতন্ত্রকে প্রশমিত করে এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল পেশিগুলোকে শিথিল করতে সাহায্য করে।
রক্তচাপ কমায়
গবেষণায় দেখা গেছে, জোয়ানে উপস্থিত প্রাকৃতিক যৌগ থাইমল রক্তনালিগুলোকে শিথিল করতে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সাহায্য করে। জোয়ানের নির্যাস খারাপ কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে পারে এবং ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করতে পারে। ফলে ধমনীতে বাধা প্রতিরোধ হয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
সর্দি-কাশি কমাতে সাহায্য
জোয়ান প্রাকৃতিক কফনাশক হিসেবে কাজ করে। জোয়ানের চা শ্বাসনালি থেকে কফ পরিষ্কার করতে সাহায্য করে, কাশি, সর্দি ও নাক বন্ধ হওয়া থেকে মুক্তি দেয়।
মুখের যত্ন
জোয়ানের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা মুখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। জোয়ান চিবিয়ে খেলে মুখের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও দাঁতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
ব্যথা উপশম
বায়োকেমিস্ট্রি রিসার্চ ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট অনুযায়ী, জোয়ানের প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে আর্থরাইটিসের ব্যথা উপশম হতে পারে। জয়েন্টের ব্যথা কমাতে পারে এবং প্রদাহজনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাঁটাচলার সমস্যা দূর করতে পারে।
এ ক্ষেত্রে তিন রকম ভাবে জোয়ান খাওয়া যেতে পারে। রাতে জোয়ান ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি পান করা, উষ্ণ পানি বা মধুর সঙ্গে জোয়ানের গুঁড়া মিশিয়ে খাওয়া এবং পাঁচ মিনিটের জন্য বীজ পানিতে ফুটিয়ে জোয়ানের চা তৈরি করে খাওয়া যেতে পারে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
জোয়ান হজম ও বিপাকের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। এর অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল ও প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি সংক্রমণ, ব্রণ ও ফুসকুড়ি প্রতিরোধে সহায়তা করে। হরমোনের ভারসাম্য বজায়ের মাধ্যমে জোয়ান ঋতুস্রাব চক্র নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
জোয়ানের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
জোয়ান সাধারণত নিরাপদ হলেও অতিরিক্ত ব্যবহার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে এসিডিটি, এসিড রিফ্লাক্স ও পেপটিক আলসার। থাইমলের উচ্চ মাত্রার ফলে মাথা ঘোরা বা বমি ভাব দেখা দিতে পারে।