অনেক সময় এমন হয়, চোখ ও শরীরজুড়ে জড়িয়ে থাকে ভয়ানক ক্লান্তি; মাথা থেকে পা পর্যন্ত অসহ্য যন্ত্রণা। তার মানে ভাববেন না আপনি একাই এ সমস্যায় ভুগছেন। হিসাব বলছে, পৃথিবীর প্রায় ৩ শতাংশ মানুষ এই একই সমস্যায় আক্রান্ত। যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ‘ফাইব্রোমায়ালজিয়া’।
মনে করা হয়, নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি এতে আক্রান্ত হয়। এই রোগে আক্রান্ত রোগীর ঘাড়, কাঁধ, পায়ের পেশি, হাঁটু বা বুকে যন্ত্রণার অনুভূতি হয়।
এ ছাড়া নারীদের মধ্যে মেনসট্রুয়াল ক্র্যাম্প, পেলভিকের যন্ত্রণা প্রভৃতি সমস্যা হয়ে থাকে। এই ক্রনিক যন্ত্রণা, ঘুমের সমস্যার কারণে এনার্জি একেবারেই থাকে না। সব সময় নিজেকে অত্যধিক ক্লান্ত মনে হয়। স্ট্রেস, ট্রমা, ভাইরাল ইনফেকশন প্রভৃতি নানা কারণে এ সমস্যা হয়ে থাকে। এ সমস্যার উৎস নিয়ে নানা মতপার্থক্য থাকলেও এর প্রমাণিত কোনো সঠিক কারণ নেই। তবে এক্সারসাইজ ও ডায়েটের সাহায্যে এ সমস্যা থেকে মুক্তি সম্ভব।
রইল সঠিক ডায়েটের খোঁজ–
তিসি বীজে প্রচুর পরিমাণে আলফা লিনোলেনিক এসিড থাকে, যা যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন দুই থেকে চার চা চামচ করে তিসি বীজ খাওয়া অত্যন্ত উপকারী।
সকালে গরম পানিতে গোসল করলে ক্লান্তি দূর করার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের স্টিফনেস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এই স্নান রক্তপ্রবাহকে ঠিক করতে ও যন্ত্রণা কমিয়ে দেয়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার টিস্যুর ইনফ্লামেশন কমাতে সহায়তা করে। তাই ডায়েটে রাখুন বাঁধাকপি, আপেল, টমেটো, গাজর, আদা, পেঁয়াজ প্রভৃতি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরা ফল ও শাকসবজি। যেসব পানীয় খেলে ঘুমে সমস্যা সৃষ্টি করে, যেমন– কফি বা অ্যালকোহল; সেসব পানীয় বর্জন করতে পারলেই ভালো।
পেশির শক্তি বাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিনের দরকার। তাই ডাল, লো ফ্যাট ডেইরি, মাছ-মাংসের মতো প্রোটিনের উৎস রোজকার খাদ্যতালিকায় অবশ্যই রাখুন। যে কোনো ধরনের ভাজা খাবার যতটা সম্ভব কম খান। পারলে একেবারেই বাদ দিতে পারেন।
সঠিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম শরীর যাতে পায়, তার জন্য ডেইরি প্রডাক্ট, বাদাম খান। অথবা সঠিক পরিমাণে সাপ্লিমেন্টও নিতে পারেন। শরীরকে হাইড্রেট রাখতে কম করে আট গ্লাস পানি খান। পেশির যন্ত্রণা ও টিস্যুর প্রদাহ কমানোর জন্য ফ্রেশ জুস বা গ্রিন টি খান। শরীরের প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বা স্ট্রেস কমানোর জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের উপস্থিতি জরুরি। এর জন্য সঠিক সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে।
লেখক: মেডিকেল অফিসার, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল, টঙ্গী।