বিশ্বের প্রায় ৭০০ মিলিয়ন মানুষ ক্যাসাভা নামক কন্দজাতীয় খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল। এটি বিশেষত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য অন্যতম প্রধান খাদ্য। তবে সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত না করলে এটি প্রাণঘাতীও হতে পারে। ক্যাসাভার কিছু প্রজাতিতে রয়েছে সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসাইড, যা মানবদেহে প্রবেশ করলে সায়ানাইড বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।
ক্যাসাভা মানিওক বা ইউকা নামেও পরিচিত, মূলত দক্ষিণ আমেরিকার উদ্ভিদ। তবে ঔপনিবেশিক আমলে এটি আফ্রিকা ও পরে এশিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে। এটি উষ্ণ ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে চাষযোগ্য এবং তুলনামূলকভাবে কম যত্নেই উৎপাদিত হয়। বিশেষ করে যেখানে অন্যান্য ফসল জন্মাতে পারে না, সেখানেও ক্যাসাভা টিকে থাকে। এটি কম শ্রমে বেশি ক্যালোরি সরবরাহ করতে পারে, তাই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) জানায়, ক্যাসাভার মূল এবং কিছু জাতের পাতা সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসাইড বহন করে, যা মানবদেহে প্রবেশ করলে সায়ানাইড বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তবে উপযুক্তভাবে ভেজানো, শুকানো ও ছুলে নেওয়া হলে এর বিষাক্ত উপাদান দূর করা সম্ভব।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে পশ্চিম উগান্ডায় এক সায়ানাইড বিষক্রিয়ার ঘটনা ঘটে, যেখানে ক্যাসাভা খেয়ে ৯৮ জন আক্রান্ত হন এবং ২ জন মারা যান। পরবর্তীতে পরীক্ষায় দেখা যায়, স্থানীয় বাজারে বিক্রি হওয়া বন্য ক্যাসাভা বেশি মাত্রায় বিষাক্ত উপাদান বহন করছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষক ও সাধারণ জনগণকে সচেতন করা প্রয়োজন যাতে তারা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ক্যাসাভা প্রক্রিয়াজাত করেন।
ক্যাসাভার মূল থেকে স্টার্চ ও ময়দা তৈরি হয়, যা বিভিন্ন খাবার ও শিল্পে ব্যবহৃত হয়। কিছু অঞ্চলে এর পাতাও সবজি হিসেবে খাওয়া হয়, যদিও এটি সঠিকভাবে রান্না না করলে বিষাক্ত হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে প্রক্রিয়াজাত করা হয়, তাহলে ক্যাসাভা পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্য হিসেবে টিকে থাকবে। তবে অবহেলা করলে এটি হতে পারে নীরব ঘাতক।