গত প্রায় দেড় বছর ধরে জ্বর শব্দটি শুনলেই সবাই ভড়কে যায়। কারো জ্বর হয়েছে শুনলেই চিকিৎসকরা সাবধানতার জন্য কোভিড পরীক্ষার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে আলাদা থাকতে বলছেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে বর্ষাকাল এলেই ডেঙ্গু জ্বরের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনাটাও থেকে যায়।
উপসর্গ : ডেঙ্গু এবং কোভিড- এই দুই রোগের প্রাথমিক উপসর্গ হলো জ্বর। দুই জ্বরের কিছু উপসর্গে মিল আছে। তাই ডেঙ্গু না কোভিড থেকে জ্বর হচ্ছে বুঝতে সমস্যা হতে পারে। অবশ্য কয়েকটি লক্ষণের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে ডেঙ্গু হলে জ্বরের সঙ্গে গাঁটে গাঁটে ব্যথা ছাড়াও পেশিতে, মাথায়, চোখের পেছনে ব্যথা হতে পারে। পাশপাশি ত্বকে র্যাশ দেখা দিতে পারে। করোনায় এ ধরণের উপসর্গ সাধারণত থাকে না। কোভিডে জ্বরের সাথে হাঁচি, কাশি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট হতে পারে। ডেঙ্গুতে আবার এমন উপসর্গগুলো নেই।
পরীক্ষা : তবে এই ধরনের উপসর্গের উপর ভিত্তি করে প্রাথমিক ধারণা করা যায় মাত্র। এক্ষেত্রে ডেঙ্গু হয়েছে কি না নিশ্চিত হতে ডেঙ্গু এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন পরীক্ষা এবং করোনা রয়েছে নাকি তা জানতে আরটি-পিসিআর টেস্ট করিয়ে নিতে পারেন। এর পাশপাশি রক্তের সিবিসি, প্লাটিলেট কাউন্ট, যকৃৎ ও কিডনির টেস্টগুলোও করিয়ে নেবেন। কারণ, এগুলো চিকিৎসার প্রয়োজনে লাগবে।
চিকিৎসা : সাধারণত ভাইরাসজনিত রোগের তেমন কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। ডেঙ্গু হলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে, মাড়ি, ত্বক বা অন্য কোনো অঙ্গ দিয়ে অস্বাভাবিক রক্তপাত হতে পারে। এ রকম জটিলতা হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে এবং স্যালাইন নিতে হতে পারে। সহজ করে বললে, ডেঙ্গুতে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ে অন্যদিকে করোনায় রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা তৈরি হয়।
যেহেতেু এই রোগের কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। জ্বর ও গায়ে ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল খেতে পারেন। বিশ্রামের পাশাপাশি পরিমিত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো, কোভিড ও ডেঙ্গু একসাথে হতে পারে। আর এমনটা ঘটলে রোগ খারাপ দিকে পৌঁছে যাওয়ার আশঙ্কা বহুগুণে বেড়ে যায়। তখন রোগীকে বাসায় না রেখে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করাই ভালো।
করণীয় :
১.নিজের ও পরিবারের সুরক্ষা নিজেরই কাছে। বাড়ির চারপাশে বৃষ্টির পানি জমতে দেওয়া চলবে না। টব, বাতিল টায়ার, পাস্টিকের বোতল ইত্যাদির ভেতর পানি জমে মশা বংশ বিস্তার করতে পারে। তাই এগুলো ফেলে দিন।
২.বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখুন। দিনে-রাতে যখনই ঘুমাবেন তখন অবশ্যই মশারি টাঙিয়ে ঘুমাবেন।
৩. মশা সুযোগ পেলেই ঘরে ঢুকে কামড়ে দিতে চায়। কিন্তু একদম সকালে ও সন্ধ্যার সময়টাতে বেশি সংখ্যক মশা ঘরে প্রবেশ করে। এই সময়টায় দরজা-জানলা বন্ধ রাখুন।
৪.আলমারির পেছন, খাটের তলায়, ঘরের অন্ধকার কোণগুলোতে মশা বিশ্রাম নেয়। এই জায়গাগুলিকে পরিষ্কার রাখুন।
৫. জ্বর হলে অবহেলা করবেন না। চিকিৎসকের শরাণাপন্ন হন। তিনিই রোগ নির্ণয় করে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন।