অধ্যাপক আলতাফ হোসেন সরকার: সারাবছর নানা কাজের মধ্যে ঈদের ছুটি আমাদের জন্য আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। তাই তো অনেক কষ্ট হলেও নাড়ির টানে সবাই যার যার বাড়িতে ছোটেন। ঈদে বা ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে আমাদের যেমন আনন্দ হয়, তেমনি অনেক ধকল বা কঠিন চাপ সহ্য করতে হয়। আবার নানা ধরনের ব্যথা-বেদনাও বেড়ে যায়। ঈদের সময় কাজকর্মের কারণে শরীরের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা কোমর ব্যথা তৈরি করে। যাদের কোমর ব্যথা আছে তাদের ব্যথা আরও বাড়িয়ে দেয়।
আবার যাত্রাপথে দীর্ঘ যানজট, ফেরি স্বল্পতা ও ভিড়ের মধ্যে অনেকেরই দীর্ঘ সময় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এ সমস্ত ধকল আমাদের শরীরকে অসুস্থ করে তোলে। অনেকেই দীর্ঘ সময় বসে থাকার পর ঘাড়, কোমর, হাঁটু ও গোড়ালি এবং অন্যান্য জয়েন্টে ব্যথার সম্মুখীন হন। ব্যথামুক্ত ঈদ ভ্রমণে কিছু পরামর্শ–
-দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে বা বসে থাকবেন না। মাঝে মাঝে পোশ্চার বা ভঙ্গি পরিবর্তন করুন। যাত্রাপথে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার যাত্রা শুরু করুন।
-অনেকেই বাসে বা গাড়িতে বসে ঘাড় ঝুঁকিয়ে মোবাইল ব্যবহার করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে মোবাইল আই লেভেলে অর্থাৎ চোখ বরাবর রেখে ব্যবহার করুন।
-ভ্রমণে ঘুমানোর সময় ঘাড়ের অবস্থান ঠিক রেখে ঘুমান। যারা আগে থেকেই ঘাড়, কোমর ও অন্যান্য জয়েন্টের ব্যথায় ভুগছেন তারা মাস্কুলোস্কেলিটাল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভ্রমণ করুন।
-বাসে বা ট্রেনে বেশিক্ষণ হাঁটু ঝুলিয়ে বসবেন না। মাঝে মাঝে হাঁটু ভাঁজ ও সোজা করুন। হাঁটু সোজা রেখে পায়ের পাতা ওপরের দিকে টানুন; ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন (১০-১৫ বার)। একইভাবে পায়ের পাতা নিচের দিকে নিন। এতে আপনার হাঁটু ব্যথামুক্ত থাকবে ও পায়ের পাতা ফুলবে না।
-অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের অবশ্যই ভ্রমণের আগে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ভ্রমণের সময় অনেকক্ষণ বসে থাকার কারণে পা ঝিঁ ঝিঁ ধরে এবং পায়ে অসাড়তা আসে এবং রক্ত চলাচল কমে যায়। তাই সম্ভব হলে যাত্রাবিরতিতে কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করে নিন। ঘাড় এবং কোমরের পেছনে দেওয়ার জন্য বালিশ অথবা কুশন সঙ্গে রাখতে হবে। কোনো ধরনের ভারী জিনিস বহন করা যাবে না।
-যারা আগে থেকেই ঘাড়, কোমর ও অন্যান্য জয়েন্টে ব্যথায় ভুগছেন তারা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভ্রমণ করুন। এ ছাড়াও ভ্রমণের সময় বিশুদ্ধ পানি সঙ্গে রাখুন। দীর্ঘ ভ্রমণে ঢিলেঢালা, আরামদায়ক পোশাক পরিধান করুন।
লেখক: ব্যাকপেইন বিশেষজ্ঞ, লেজার ফিজিওথেরাপি সেন্টার, পান্থপথ, ঢাকা