নাসিম রুমি: অ্যাজমা বা হাঁপানি একটি শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। এটির প্রধান লক্ষণই হচ্ছে শ্বাসকষ্ট। আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে বছরের যে কোনো সময়েই হাঁপানি সমস্যা বাড়তে পারে। এই রোগ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বংশগত।
তবে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ যদি কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলা যায়।
হাঁপানি কি?
হাঁপানি ফুসফুসের একটি দীর্ঘমেয়াদী দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা শ্বাসনালীকে প্রদাহ এবং সংকীর্ণ করে। শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ হলে শ্বাসনালি ফুলে যায়। এরপর ধীরে ধীরে শ্বাসকষ্ট, কাশি, বুকের মধ্যে শোঁ শোঁ শব্দ, বুকে চাপ ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। এসবের সমন্বিত রোগটির নামই হাঁপানি।
হাঁপানি কেন হয়?
হাঁপানির কোন সুনির্দিষ্ট কারণ নেই। বিভিন্ন ব্যক্তিভেদে হাঁপানির বিভিন্ন বিভিন্ন কারণ হয়ে থাকে যেগুলো হাঁপানি রোগের উৎপত্তি ও স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে থাকে।
আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ রোগ জেনেটিক বা বংশগত কারণে হতে পারে। বংশে কারও এ রোগ থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের যে কারও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এছাড়া আরও কিছু কারণ রয়েছে যেগুলো হল,
১. পশুর লোম, আরশোলা, রেণু, ছত্রাক প্রভৃতি হাঁপানির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
২. বায়ুদূষণ, সিগারেটের ধোঁয়া, কারখানার বিভিন্ন উত্তেজক পদার্থ, ঝাঁজালো গন্ধ, ইত্যাদির কারণে হাঁপানির আশঙ্কা বেড়ে যায়।
৩. আবহাওয়ার পরিবর্তন, ঠান্ডা বাতাস, হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনেও অনেকেও হাঁপানি সমস্যা দেখা দেয়।
৪. বিভিন্ন ব্যথানাশক ওষুধ, অ্যাসপিরিন, হেরোইন প্রভৃতির অতি ব্যবহারের কারণে হাঁপানি হতে পারে।
৫. ব্যক্তিভেদে কিছু খাবার, যেমন গরুর মাংস, চিংড়ি, ইলিশ, বেগুন—এসব খেলে হাঁপানির মাত্রা বাড়তে পারে।
হাঁপানির লক্ষণ
হাঁপানির লক্ষণগুলি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি এবং আক্রমণ থেকে আক্রমণে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। কিছু সাধারণ হাঁপানির লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
১. দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্ট
২. ব্যায়াম করার সময় দুর্বল বা ক্লান্ত বোধ করা
৩. ক্লান্ত বোধ, খিটখিটে মেজাজ,
৪. হাঁচি, মাথাব্যথা, কাশি, গলা ব্যাথা, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ হওয়া
৫. বুকে ব্যথা, চাপ বা শক্ত হয়ে যাওয়া, শো শো শব্দ করা
৬. রাতে কাশি বেড়ে যাওয়া
৭. ঘুমের সমস্যা
৮. নাকে-মুখে ধুলাবালু গেলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া
হাঁপানি নিয়ন্ত্রণের উপায়
১. হাঁপানি সমস্যায় মধু খেতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ১ চামচ মধুর সঙ্গে সামান্য দারুচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে নিয়ে খেতে পারলে শ্বাসকষ্ট অনেকটাই কমে যাবে। হাঁপানি ছাড়া সর্দি-কাশিতেও এই মিশ্রণ খুবই উপকারী।
২. লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এক গ্লাস পানির মধ্যে লেবুর রস এবং সামান্য চিনি দিয়ে রোজ খেয়ে দেখতে পারেন। হাঁপানির কষ্ট অনেক কম হবে।
৩. পানির মধ্যে এক টুকরো আদা ফেলে ফোটান। এবার পাঁচ মিনিট রেখে সেই মিশ্রণ খেয়ে নিন। শুধু হাঁপানি নয়, জ্বর, সর্দি-কাশি নয়, যে কোনো রোগেই সমান উপকারি আদার রস।
৪. পেঁয়াজ যে কোনও প্রদাহজনিত রোগ উপশমে খুবই উপকারি। তা ছাড়া নাসাপথকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। শ্বাসকষ্ট দূর করতে কাঁটা পেঁয়াজ খেয়ে দেখতে পারেন।
৫. পানি সমস্যায় ল্যাভেন্ডার তেল খুবই কার্যকরী। ১ কাপ গরম পানির মধ্যে ৫-৬ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার তেল ফেলে ধীরে ধীরে ভেপার (ভাপ) নিন। দ্রুত উপকার পাবেন।
৬. ধুলো-বালি, ধূমপান, কলকারখানার রাসায়নিক বা গ্যাস, ঠান্ডা বাতাস যেসব কারণে হাঁপানি বেড়ে যায় সেসব কারণ থেকে দূরে থাকতে হবে।
৭. হাঁপানির সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
৮. তীব্র হাঁপানি রোগীদের সবসময় সাথে ইনহেলার রাখা উচিত। কারণ দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমাতে আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থায় অ্যাজমা রোগীদের মুখে খাবার ওষুধের চেয়ে ইনহেলার ব্যবহার করতে বলা হয়।