English

18 C
Dhaka
সোমবার, জানুয়ারি ২৭, ২০২৫
- Advertisement -

স্বাস্থ্যের জন্য কোন চাল ভালো, কলে ভাঙা নাকি ঢেঁকিছাঁটা

- Advertisements -
বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের প্রধান খাবার ভাত। বাঙালির কাছে এই ভাত আরো বেশি প্রিয়। কিন্তু বাজারে কলে ভাঙানো যে চাল পাওয়া যায়, তা মসৃণ করতে গিয়ে অতিপ্রয়োজনীয় কিছু উপাদান বাদ পড়ে যায়। তবে এক সময় ঢেঁকিছাঁটা চালেই আহার চলতো সবার।
লাল রঙের এসব চাল দেখতেও ভালো লাগতো। যুগের পরিবর্তনে প্রযুক্তি হাতে এসেছে। সভ্যতার নতুন সংযোজনে যুক্ত হলো চাল ভাঙানো কল। আর কলের এই প্রযুক্তি চালের ওপরের আবরণ তুলে চালকে করে চকচকে সাদা।
যদিও সত্তরের দশকের আগে কলের চালের ব্যবহার ছিল না বললেই চলে। 

কিন্তু কলে ভাঙা চাল নাকি ঢেঁকিছাঁটা চাল, কোনটি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, তা নিয়েই প্রশ্ন থেকেই যায়। চলুন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

ঢেঁকিছাঁটা চালের গুণাগুণ

কলে ভাঙা চালে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু খাদ্য উপাদান থাকে না।

এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন-বি, খনিজ লবণ, বায়োটিন, আমিষ, চর্বি, ফাইটোকেমিক্যাল ও ফাইবার। এসব চাল থেকে চলে যায় আয়রন, জিংক, ম্যাংগানিজ, ভিটামিন-এ ও ভিটামিন-ই। কলে ভাঙানো চালের ভাত খেলে এসব উপাদানের অভাব হওয়াই স্বাভাবিক। এক কাপ ঢেঁকিছাঁটা চালে ৭৮ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম থাকে। এর বিপরীতে কলে ভাঙানো চালে থাকে মাত্র ১৯ মিলিগ্রাম।

ঢেঁকিছাঁটা চালে পটাশিয়াম থাকে ১৭৪ মিলিগ্রাম, আর কলের চালে ৫৫ মিলিগ্রাম। ঢেঁকিছাঁটা চালে তিন গ্রাম ফাইবারের বিপরীতে কলের চালে ফাইবার নেই বললেই চলে। এক কাপ ঢেঁকিছাঁটা চালের ভাতে দৈনন্দিন চাহিদার ৮০ শতাংশ ম্যাংগানিজ থাকে। ম্যাংগানিজ আমাদের স্নায়ু ও প্রজননতন্ত্রের কার্যক্রমে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এই চালে সেলেনিয়াম নামক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বিদ্যমান; যা হৃদ্‌রোগ, কর্কট রোগ ও বাতের ঝুঁকি কমায়। তাই বলা যায়, কলের চালের তুলনায় ঢেঁকিছাঁটা চালই ভালো।

কলে ভাঙানো চালে ডায়াবেটিস 

কলে ভাঙানো চালের ভাতের সঙ্গে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের যোগসূত্র রয়েছে। ২০২০ সালে ডায়াবেটিক কেয়ার নামে বিখ্যাত জার্নালের গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, ২১টি দেশের ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষের ওপর পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, কলের চালের ভাত ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। অতিরিক্ত ভাত খাওয়ার পর রক্তে হুহু করে বেড়ে যায় চিনির মাত্রা। সঙ্গে বেড়ে যায় ইনসুলিনের চাহিদা। এভাবে চলতে থাকলে এক পর্যায়ে আমাদের অগ্ন্যাশয় হয়ে পড়ে ক্লান্ত, বিপর্যস্ত। সামাল দিতে পারে না অতিরিক্ত চিনির মাত্রা। আর এই সুযোগটি লুফে নেয় ডায়াবেটিস। ঢেঁকিছাঁটা চালে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে।

পান্তা ভাতের মাহাত্ম্য

গবেষণায় দেখা গেছে, গরম ভাত ঠাণ্ডা করে রাখার পর এর মধ্যে একটি উপাদান তৈরি হয়, যাকে বলা যায় রেজিস্ট্যান্স শ্বেতসার। এসব শ্বেতসার খাওয়ার একটি সুফল হচ্ছে এটি যখন অন্ত্রে প্রবেশ করে, তখন ফাইবারের মতো কম শোষিত হয়। ফলে বৃহদান্ত্রে এটি গাঁজন প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। এতে শরীরে চর্বির ব্যবহার জ্বালানি হিসেবে বেড়ে যায়। এ কারণে সদ্য রান্না করা গরম ভাপ ওঠা ভাতের চেয়ে আট-দশ ঘণ্টা রেখে ঠাণ্ডা ভাত গরম করে খাওয়া ভালো।

সতর্কতা

তবে লাল বা সাদা চাল—যাই হোক না কেন, খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে সবকিছুই পরিমিত হতে হবে। পরিমাণে বেশি খেলে লাল চালের ভালো গুণগুলো নষ্ট হয়ে যায়। লাল চালে পটাশিয়াম অনেক বেশি পরিমাণে রয়েছে। কিডনি রোগীদের শরীরে যেহেতু পটাশিয়াম বেশি থাকে, সেক্ষেত্রে তাদের লাল চালের ভাত না খাওয়াই ভালো।

এ ছাড়া ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার অনেকের শরীরে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যেমন- আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম যাদের রয়েছে, তারা একটু বেশি ফাইবার, বারবার ফাইবার জাতীয় খাবার খেলে অনেক সময় লুজ মোশন বা পেট খারাপ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে তাদের লাল চাল না খাওয়াই উত্তম। আবার অনেক সময় ডায়রিয়া, পেট খারাপ হলে রুটি খাওয়া বন্ধ করে ভাত খান অনেকে। এ অবস্থায় কখনোই লাল চালের ভাত খাওয়া ঠিক হবে না। কারণ এতে ডায়রিয়ার পরিমাণ আরো বেড়ে যেতে পারে।

লাল চালে ফাইটিক এসিড থাকে। সেক্ষেত্রে আয়রন জাতীয় খাবারগুলো শরীরের যে শোষণ সেটি কমিয়ে দেয়। অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন এমন রোগীদের নিয়মিত খাদ্যতালিকায় লাল চাল না রাখাই ভালো। তারা মাঝেমধ্যে খেতে পারবেন লাল চালের ভাত।

জেনে রাখুন

তবে মনে রাখা দরকার কোনো খাবারই এককভাবে শরীর ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকে ভাঙতে বা গড়তে পারে না। আমাদের শর্করার প্রধান উৎস এই ভাত খেয়েই বাঁচতে হবে। তবে এই ভাত থেকে কী করে আরো বেশি স্বাস্থ্য রক্ষার উপযোগী উপাদান পেতে পারি সেটা অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। আর সে কারণেই হয়তো আমাদের ফিরতে হবে ঢেঁকিছাঁটা চালের কাছে, তবে সেটি হতে হবে পরিমিত।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন