শুষ্কতা শীতের দোসর। মাথার চুল থেকে পায়ের নখ, সর্বত্র তার সরব উপস্থিতি।
অনেকেই ঘরোয়া উপায়ে বিশ্বাসী। কেউ আবার চটকদার বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণভাবে তিল, নারকেল, অলিভ তেল উপকারী হলেও সকলের ত্বকের পরিস্থিতি এক রকম নয়। তাই ত্বকের ধরন ও সমস্যা অনুযায়ী তেল বেছে নেওয়া উচিত।
তিলের তেল
এটি গুণে বর্ণপ্রসাদক, পুষ্টিকারক। শরীরের বিভিন্ন প্রকার শূল ব্যথায় (কর্ণশূল, শিরশূল ইত্যাদি) নিবারক। তিলের তেল নিয়মিত মাখার অভ্যাস চর্ম, কেশ ও চোখের জন্য ভালো। বাতব্যাধি চিকিৎসায় ও পঞ্চকর্ম থেরাপিতে তিলের তেলের বিকল্প নেই। তিলে রয়েছে ফ্যাটি অ্যাসিড, ওমেগা-৩, ওমেগা-৯ এর মতো কিছু যৌগ, যা নতুন চুল গজাতে, চুলের প্রাকৃতিক রং ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে। গোসলের আধ ঘণ্টা আগে তিলের তেল মেখে রাখতে পারেন। চুল যদি খুব রুক্ষ হয় এবং ঠাণ্ডা লাগার পরিস্থিতি না হয়, তাহলে এই তেল রাতেও মাথায় মেখে রাখতে পারেন।
নারকেল তেল
নারকেল তেলে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ফাংগাল ত্বকের বিভিন্ন রোগ নিরাময় করতে পারে। শুধু তাই নয়, স্কিনটোন ফিরিয়ে আনতেও সহায়তা করে। নারকেল তেল দিয়ে ম্যাসাজ করলে ত্বকের ওপর একটি আবরণ বা আস্তরণ তৈরি হয়। যা প্রোটেক্টিভ লেয়ার হিসেবে ত্বককে রক্ষা করে ধুলাবালি, নোংরা, ময়লা থেকে। বলিরেখার সমস্যা দূর করার পাশাপাশি নারকেল তেল ত্বকের একদম গভীর স্তর পর্যন্ত প্রবেশ করে ময়েশ্চার লক করে। ফলে শীতের রুক্ষ, শুষ্ক আবহাওয়াতেও ত্বক থাকে উজ্জ্বল ও মোলায়েম।
অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েলে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি এজিং, যা ত্বকের খেয়াল রাখতে অত্যন্ত কার্যকর। কিউটিকল দূর করে নখের যত্ন নেওয়া যায়। তাই হোম ম্যানিকিওরে রাখা যেতে পারে অলিভ অয়েল। এই ময়েশ্চারাইজিং তেল নখের কোণে বা আশেপাশে লেগে থাকা খারাপ চামড়া অর্থাৎ পিলিং স্কিনগুলো দূর করতে পারে।
করঞ্জ তেল
এই তেল কৃমি, নেত্ররোগ, বাতব্যাধি ও ক্ষত নাশে প্রয়োগ হয়ে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগে বাহ্যিক প্রয়োগে আশাতীত ফল পাওয়া যায়। এই তেল প্রধানত ত্বকে ফোড়া ও একজিমা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ক্ষত নিরাময়ে প্রয়োগ করা হয়। এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণ আছে। প্রদাহ বিরোধী কার্যকলাপের কারণে আর্থ্রাইটিসে উপকারী।
নিম তেল
দৈনন্দিন জীবনে বহুমুখী স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা প্রধানত ব্রণ, ক্ষত, দাঁতের রোগ, চুলের খুশকি ও উকুনের সমস্যায় নিম তেল উপকারী। ব্রণ ও ক্ষতের সমস্যায় সরাসরি এক থেকে দুই ফোঁটা নিম তেল আঙুলে করে ব্রণের ওপর দিনে দুই থেকে তিনবার লাগিয়ে রাখুন। তবে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে তার চিকিৎসাও জরুরি। চুলের খুশকি ও উকুনের সমস্যায় শ্যাম্পুর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা নিমতেল মিশিয়ে নিয়মিত মাথায় ব্যবহার করলে ভালো। ত্বকের কালচে ভাব কাটাতেও নিমতেল উপযোগী।
ক্যাস্টর অয়েল
ছোট বাচ্চা, প্রসূতি, বয়স্কদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় বিরেচন করাতে ক্যাস্টর তেলের জুড়ি মেলা ভার। কারণ দ্রব্যগুণে এটি মধুর, উষ্ণ, পিচ্ছিল গুণযুক্ত অগ্নি দীপনকারী তেল। পাশাপাশি এটি মলবদ্ধতা, বাতরক্ত, বিষমজ্বর নাশক। এক থেকে দুই চামচ ঈষৎ গরম পানি বা দুধের সঙ্গে রাতে সেবনীয়।
বাদাম তেল
বাদাম তেলে আছে ভিটামিন বি, ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই, যা ত্বক ভালো রাখতে সহায়তা করে। বাদাম তেল শুধু শুষ্ক ত্বক থেকেই মুক্তি দেয় না, ত্বকে পুষ্টি জোগাতেও সহায়তা করে।
তবে শুধু তেল ব্যবহার করলেই হবে না। আয়ুর্বেদ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে ও পথ্য আহার করতে হবে। এ ছাড়া যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।