আমাদের দেশে যক্ষ্মা এখনও বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। এতে শুধু গরিব লোকজনই যে আক্রান্ত হচ্ছে, তা নয়- বরং এ রোগ যে কারোরই হতে পারে।
যক্ষ্মার ঝুকি কাদের বেশি, প্রতিকার পাওয়ার উপায় কী এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান।
কারা বেশি ঝুঁকিতে আছেন
যক্ষ্মা রোগীর কাছাকাছি থাকেন- এমন লোকজন, যেমন: পরিবারের সদস্য, ডাক্তার, নার্স বা সেবা-শুশ্রূষাকারীর আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, মাদকাসক্তি, বার্ধক্য, অপুষ্টি ইত্যাদি ক্ষেত্রে যক্ষ্মার ঝুঁকি থাকে। আবার যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, যেমন: এইডস রোগী, দীর্ঘ মেয়াদে স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধসেবী লোকজনের যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
যক্ষ্মা কেবল ফুসফুসে হয় না
৮৫ শতাংশ যক্ষ্মা ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। তবে ফুসফুসের আবরণী, লসিকাগ্রন্থি, মস্তিষ্কের আবরণী, অন্ত্র, হাড়, ত্বক ইত্যাদিতেও যক্ষ্মা হতে পারে। তবে হৃৎপিণ্ড, নখ ও চুল এ রোগের আওতামুক্ত।
জীবাণু প্রবেশ করলেই যক্ষ্মা হয় না। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা যক্ষ্মার জীবাণুকে ধ্বংস করতে পারে। এ জীবাণু সাধারণত কাশির মাধ্যমেই ছড়ায়। অনেক সময় যক্ষ্মা সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে এবং পরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলে প্রকাশ পেতে পারে। আবার অনেক সময় যক্ষ্মার জীবাণু দ্রুত শরীরের সর্বত্র ছড়িয়ে যায় ও জটিল আকার নেয়।
কখন সতর্ক হবেন
তিন সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে কাশি, জ্বর, অরুচি, কাশির সঙ্গে রক্ত যেতেও পারে নাও যেতে পারে, ওজন হ্রাস, অবসাদ ইত্যাদি দেখা দিলে অবশ্যই যক্ষ্মা পরীক্ষা করা উচিত। এর বাইরে দীর্ঘক্ষণ ধরে লসিকাগ্রন্থির স্ফীতি, মলত্যাগের অভ্যাসে আকস্মিক পরিবর্তন, কখনও কোষ্ঠকাঠিন্য কখনও ডায়রিয়া, বুকে বা পেটে পানি জমা ইত্যাদিও উপসর্গ হিসেবে বিবেচ্য।
যক্ষ্মা নিয়ে ভয় নেই
যক্ষ্মা হলেও আতঙ্কিত হবেন না। এ রোগের সুচিকিৎসা আছে। তবে পূর্ণ মেয়াদে ওষুধ সেবন করতে হবে। দু’ধরনের ক্যাটাগরিতে ওষুধ দেয়া হয়, ছয় মাস ও আট মাসের মেয়াদে। ওষুধ অনিয়মিত খেলে পরবর্তী সময়ে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা হতে পারে, যা সারানো খুব জটিল। সারা দেশে ডটস সেন্টারে বিনা মূল্যে যক্ষ্মার ওষুধ দেয়া হয়। তাই রোগের লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।