এবার বেশ খানিকটা আগেভাগেই চলে এসেছে শীত, ভালোই জেঁকে বসেছে। ভারি কাপড় পরে বাইরে বের হতে হচ্ছে। সেইসঙ্গে অনেকেই উষ্ণ থাকতে বাসার ভেতরে মোজা পরছেন, রাতে ঘুমাচ্ছেনও মোজা পরে। তবে অনেকেই জানেন না, মোজা পরে শোয়ার অভ্যাস স্বাস্থ্যকর নাকি ক্ষতিকর।
চিকিৎসকরা বলছেন, মানুষের হাত ও পা অতিমাত্রায় ঠান্ডা হয়ে যাওয়াকে রায়নাউড সিনড্রোম বলা হয়, যার ফলে পায়ে ভালোভাবে রক্ত পৌঁছাতে পারে না। এতে করে হাত ও পায়ে অসাড়তা তৈরি হয়। শীতের রাতে পায়ে মোজা পরলে এই সিনড্রোমের উপসর্গ কমে।
মোজা পরে ঘুমালে পা উষ্ণ থাকে, ফলে রক্ত সঞ্চালন ভালোভাবে হয়। এর ফলে শরীরে রক্ত প্রবাহ এবং অক্সিজেন প্রয়োজন মতো নির্দিষ্ট থাকে এবং হার্ট, ফুসফুস এবং পেশী তাদের সর্বোত্তম ক্ষমতাকে কাজ লাগাতে পারে।
নারীদের মেনোপজের সময় রাতে হট ফ্ল্যাশ দেখা দিলে অর্থাৎ আকস্মিকভাবে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি, শরীর গরম এবং ঘাম অনুভব হয়। মোজা পরলে পায়ের অংশ উষ্ণ থাকে যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আমাদের শরীরের সবচেয়ে সংবেদনশীল অঙ্গগুলোর মধ্যে পা একটি। যখন পা ঠান্ডা থাকে তখন স্বাভাবিকভাবেই ঘুমাতে অসুবিধা হতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়ায় ছয়জন পুরুষ নিয়ে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মোজা পরিহিত পুরুষরা ৩২ মিনিট বেশি এবং মোজা ছাড়া ব্যক্তিদের তুলনায় সাড়ে ৭ মিনিট পূর্বেই দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। মোজা পরে ঘুমালে পা উষ্ণতা পায়, যা দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে এবং দীর্ঘক্ষণ ঘুমাতে সাহায্য করে।
তবে মোজা পরে ঘুমানোর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। মোজা পরে ঘুমালে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ভালভাবে যেমন হয়, তেমনি মোজা বেশি টাইট হলে রক্ত চলাচল কমে যেতে পারে। মোজা যদি বাতাস চলাচলের উপযোগী না হয় তবে তাপকে শরীর থেকে বের হতে বাধা দেবে এবং শরীর অতিরিক্ত গরম হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও মোজা যদি পরিষ্কার না হয় তবে পায়ে বিভিন্ন সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
শিশুরাও মোজা পরে ঘুমাতে পারে। তবে নরম, প্রাকৃতিক, বাতাস চলাচল করতে পারার মতো উপাদান যেমন তুলার ঢিলেঢালা মোজা দিতে হবে। টাইট ইলাস্টিক টপসসহ মোজা এড়িয়ে চলাই শ্রেয়, যেহেতু এটি শিশুর শরীরের রক্ত প্রবাহকে সীমাবদ্ধ করতে পারে।
যদি শরীরে রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা, পা ফুলে যাওয়া অথবা পায়ে রক্ত প্রবাহ সীমিত করে দেওয়ার মতো শারীরিক সমস্যা থাকে তবে মোজা পরে ঘুমানোর বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিন।