মাথার স্ক্যাল্প থেকে যে মরা চামড়া ওঠে, যা খুশকি নামে পরিচিত। সাধারণত শীতে শুষ্কতা ও ধুলোবালির কারণে এর প্রকোপ বাড়ে। এতে মাথা চুলকায়।
কিন্তু খুশকি খুব বেশি হলে তাকে বলে সেবোরিক ডার্মাটাইটিস। খুশকির সঙ্গে সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের পার্থক্য রয়েছে। খুশকি হলে স্ক্যাল্প থেকে মরা চামড়া উঠবে, স্ক্যাল্পে কোনো প্রদাহ থাকে না। যদি মাথায় খুশকি এবং একই সঙ্গে স্ক্যাল্পে প্রদাহও থাকে, তবে তাকে খুশকি বলা যাবে না, সেবোরিক ডার্মাটাইটিস বলতে হবে। খুশকি পুরো নির্মূল করা সম্ভব না হলেও কমিয়ে রাখা খুশকি নিবারক শ্যাম্পু দিয়ে। খুশকি বেশি হলে চুল ঝরে পড়ে। অনেকে মনে করেন, খুশকি হলে মাথায় বেশি বেশি তেল দিতে হবে। ধারণাটি ভুল। কারণ তেল দেওয়ায় মাথা সব সময় তৈলাক্ত ও ভেজা থাকে। ফলে মাথায় এক ধরনের ছত্রাক আক্রমণ করে বসে। কেউ কেউ খুশকি মাথায় খৈল ব্যবহার করেন। এটিও ঠিক নয়। খৈল ব্যবহারে খুশকি স্ক্যাল্পে আরও লেগে থাকে। ফলে মনে হয় খুশকি কমেছে।
করণীয় : যাদের মাথায় খুশকি, তারা স্ক্যাল্প ভেজা রাখবেন না। বরং সব সময় স্ক্যাল্প যাতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। ভেজা চুল বাঁধা যাবে না। যাদের খুশকি আছে, তাদের ব্যবহার করা চিরুনি অন্য কারও ব্যবহার করা ঠিক নয়। কারণ খুশকিজনিত ছত্রাক একজনের মাথা থেকে অন্য মাথায় চলে আসতে পারে। দেহের তেল গ্রন্থিযুক্ত, যেমন-মাথার ত্বক, বুকের মধ্যখানে, কানের পেছনের দিকে, নাকের পাশের খাঁজ, ভ্রু, ঠোঁট, বগলে ইত্যাদি লোমযুক্ত স্থানে যদি খোসাযুক্ত লালচে দাগ দেখা যায়, তা হলে সেবোরিক ডার্মাটাইটিস বলেই ধরে নিতে হবে। অনেক সময় চোখের পাতাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এতে চোখের পাতা লালচে হয় এবং ছোট ছোট সাদা আঁশের মতো মরা চামড়া উঠতে দেখা যায়। দাড়ি, গোঁফ ইত্যাদি অংশও এতে আক্রান্ত হয়। সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের ওপর বাইরের জীবাণুর আক্রমণ ঘটে। সে ক্ষেত্রে দেখতে কিছুটা অ্যাকজিমার মতো মনে হয়। আরেকটি রোগ প্রায়ই খুশকির মতো দেখা যায়। এর নাম সোরিয়াসিস। যদি কারও স্ক্যাল্প সোরিয়াসিস হয়, তখন মনে হবে, মাথায় খুব বেশি পরিমাণে খুশকি রয়েছে। তবে এ দুটো আঁশের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে-সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের আঁশগুলো তৈলাক্ত। কিন্তু সোরিয়াসিসের আঁশ শুকনো ও রুপালি রঙের। যেমন-মাথার সোরিয়াসিসে চুলের সামনের সীমানা বরাবর স্পষ্ট দাগ দেখা যায়। কিন্তু খুশকি বা সেবোরিক ডার্মাটাইটিসে তেমন কোনো দাগ দেখা যায় না।
চিকিৎসা : খুশকি ও সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের চিকিৎসা প্রায় একই। খুশকি নিবারক শ্যাম্পু, যেমন-জিংক পাইরিথিওন, সেলেনিয়াম সালফাইড বা কেটোকোনাজল শ্যাম্পু ব্যবহারে খুশকি কমানো যায়। যদি বেশি পরিমাণে প্রদাহ থাকে, তবে কম শক্তিশালী কর্টিসোন লোশন বা জেল ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। তার পরও যদি না কমে তবে অভিজ্ঞ ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
লেখক : চর্ম যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ
সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক
আল-রাজি হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা